• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
একদিনে সিরাজগঞ্জ ভ্রমণ

রাতের যমুনা নদী

ভ্রমণ

একদিনে সিরাজগঞ্জ ভ্রমণ

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮

রাজধানীর এমন অনেকেই আছেন যারা সপ্তাহে এক দিনের বেশি ছুটি পান না কিন্তু ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে, অনেক কিছু দেখতে ইচ্ছে করে। তাদের ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা হলো সিরাজগঞ্জ।

একদিনের জন্য আপনি ঘুরে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জের তিনটি জায়গায়। সেগুলো হলো রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি, নবরত্ন মন্দির এবং যমুনা নদী।

রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি : এটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত। ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে প্রথম বাড়িটি কিনে নেন। এটি একটি দোতলা ভবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ সালের দিকে প্রথম শাহজাদপুর এই কুঠিবাড়িতে আসেন। এবং এখানেই রচনা করেছেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুই পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হূদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি, গীতাঞ্জলি, পোস্ট মাস্টার গল্পের ‘রতন’ চরিত্রও শাহজাদপুরে বসেই লেখা। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে অবস্থান করেছেন। ১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত করা হয়। এখন সকল দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত। জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষ রয়েছে। এই ১৬টি কক্ষেই রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের এবং নানা সময়ের সব ছবি । তাছাড়াও এখানে কবির রয়েছে সকল শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র।

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির

 

নবরত্ন মন্দির : নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত বলে একে হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির নামেও ডাকা হয়। জনশ্রুতি অনুসারে, মন্দিরটি ১৬৬৪ সালের দিকে রামনাথ ভাদুরী নামে এক জমিদার নির্মাণ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন মন্দিরটি বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের সময়কাল ১৭০৪ থেকে ১৭২৮ সালের মধ্যে কোন এক সময় নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট। মূল মন্দিরের আয়তনে ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। একসময়ে মন্দিরে নয়টি চূড়া ছিলো বলে নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতা ইত্যাদি। নবরত্ন মন্দিরটি ৭টি বারান্দা ও ৫টি দরজার সমন্বয়ে গঠিত। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চণ্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সব মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

যমুনা নদী : যমুনা নদীর পাড় খুবই সুন্দর জায়গা। পুরোটাই বাঁধানো। অনেকেই জায়গাটিকে  উত্তর বঙ্গের কক্সবাজার হিসেবেই জানে। আপনি দুই জায়গায় ঘুরতে পারবেন নদীর পাড় দিয়ে, একটা হলো হার্ড পয়েন্ট (লোকাল লোকজন বলে ক্লোজার) এবং আরেকটা হলো চায়না বাঁধ। এই দুই জায়গায় আপনি রিকশা এবং নৌকা দুটোতেই যেতে পারবেন। নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০ টাকা জনপ্রতি। নৌকাতে ঘুরতেই বেশি ভালো লাগবে বিকাল বেলায়। আর আপনার মাছ মারার শখ থাকলে বড়শি, ছিপ সাথে করে আনবেন। অনেকেই বিকেলে নদীর ধারে বসে মাছ ধরে।

যাওয়া এবং আসা : সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পরপর অভি এবং এসআই কোম্পানির বাস ছাড়ে। ভাড়া ২৫০ টাকা জনপ্রতি। তবে যারা এসি বাসে যেতে চান তারা মিরপুর-২-এ চলে যাবেন। ওখান থেকে ঢাকা লাইন কোম্পানির এসি বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪০০ টাকা। এ ছাড়া আপনি উওরবঙ্গের যেকোনো বাসেই যেতে পারেন, তবে আপনাকে নামতে হবে কড্ডার মোড়ে অথবা সিরাজগঞ্জ রোডে।

আপনি সিরাজগঞ্জ পৌঁছে পাবনার বাসে উঠে শাহজাদপুর চলে যাবেন। ভাড়া নিবে ৫০ টাকা। তারপর শাহজাদপুর দিলরুবা বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। ওখান থেকে ভ্যানে করে যাবেন রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি। ভ্যান ভাড়া জনপ্রতি ৫ টাকা। আপনি চাইলে পাবনা অথবা শাহজাদপুরের বাসে উঠে সরাসরি রবীন্দ্র কাচারী বাড়িতে যেতে পারেন। রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি দেখে আপনি দুপুরের খাবার শাহজাদপুরেও খেতে পারবেন অথবা আপনি চাইলে সিরাজগঞ্জ রোডে ফুড ভিলেজেও খেতে পারবেন।

শাহজাদপুর থেকে আপনি যেকোনো বাসে উঠে সিরাজগঞ্জ রোডে আসবেন। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। সিরাজগঞ্জ রোড় থেকে ভ্যানে করে যেতে হবে আপনাকে নবরত্ন মন্দিরে। ভ্যান ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। তবে বৃষ্টি হলে রাস্তা খারাপ হয়ে যায়, তখন ভাড়া বৃদ্ধি পায়।

নবরত্ন মন্দির দেখে আপনি আবারো সিরাজগঞ্জ রোডে আসবেন। তারপর লোকাল বাসে করে সিরাজগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আসবেন। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ টাকা। তারপর রিক্সা নিয়ে সরাসরি যমুনা নদীর পাড়।

এরপর সময় থাকলে আপনি সিরাজগঞ্জ শহরটা ঘুরে দেখতে পারেন। ছোট শহর। ব্যাটারি চালিত রিক্সায় ১ ঘন্টাতেই শেষ করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টায়। অবশ্য আপনি চাইলে কড্ডার মোড়ে গিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যেকোনো বাসেই উঠতে পারবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads