• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ভ্রমণ

দামতুয়া অভিযান

  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৯

শাহ রাজন

 

 

দামতুয়া ঝরনা যাওয়ার কথা চলছে বেশ কয়েকদিন ধরেই; কিন্তু সময় আর হয়ে উঠছে না। আমরা ৬ জন এবার কোমর বেঁধে নামলাম। এবার যাবই যাব। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। প্ল্যান করে ফেললাম। অর্ধেক বেলা অফিস করে দিলাম ছুট চট্টগ্রামের দ্বিতীয় শাহ আমানত সেতুর দিকে। কেননা সেখান থেকেই আমরা কক্সবাজারের বাসে করে চকরিয়া যাব। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বাস আমাদের চকরিয়ায় আলীকদম যাওয়ার জিপ স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে গেল। এবার সেখান থেকে আলীকদম যাওয়ার চাঁন্দের গাড়ি (এক ধরনের জিপ) ধরতে হবে। জানি, যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ৬ জন উঠে পড়লাম চাঁন্দের গাড়িতে। ঘণ্টাখানেক জার্নি শেষে গাড়ি আমাদের আলীকদম বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে টমটমে করে চলে গেলাম আলীকদম বাজারে। আমাদের গন্তব্য ছিল ‘হোটেল আলীকদম আবাসিক’।

দামতুয়া যেতে হবে মোটরসাইকেল অথবা রিজার্ভ চাঁন্দের গাড়ি করে। আমাদের পছন্দ মোটরসাইকেল, তাই হোটেলে সামান্য ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লাম পরের দিনের জন্য মোটরসাইকেল ঠিক করতে। শেষ পর্যন্ত ৬ জনের জন্য ৩টা মোটরসাইকেল ঠিক করে রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম, কেননা কাল খুব ভোরে উঠতে হবে।

সকালের নাশতা করতে না করতেই মোটরসাইকেল এসে হাজির। শুরু হলো পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে আমাদের পথচলা। আলীকদমের পান বাজার হয়ে আলীকদম টু থানচি যে সড়কটি হয়েছে, সেই সড়কটি দিয়েই যাচ্ছি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চতম সড়ক। পর্যটন স্পট ডিম পাহাড় এই রাস্তা ধরেই যেতে হয়। মাঝখানে পড়ল আর্মি ক্যাম্প, সেখানে আমাদের নাম এন্ট্রি করে নিল আর জমা রাখল সঙ্গে আনা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি। আবার আমাদের যাত্রা শুরু। এই রাস্তায় মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ মজা নিলাম। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের যাত্রা শেষে পৌঁছে গেলাম আদুপাড়া। এখানে থেকে গাইড নিয়েই আমাদের ট্রেকিং শুরু হবে। যথারীতি গাইড সমিতি আমাদের একজন গাইড ধরিয়ে দিল। আর তাকে নিয়ে শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং। প্রথমে দুটি খাড়া পাহাড় বাইতে হলো। আমাদের কষ্ট দেখে গাইড বাঁশ কেটে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন।

তারপর আবার ঝিরিপথ। এভাবে কয়েকবার পাহাড় আর ঝিরিপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম একটি পাড়ায়। কী বলে! এখান থেকে নাকি আরো ঘণ্টা খানেকের পথ। পাড়ার গাছ থেকে ফ্রি ফ্রি কামরাঙ্গা খেয়ে শরীর চাঙ্গা করে আবার রওয়ানা দিলাম। ঝিরিতে নামার পর দেখছি পানির জোর বাড়ছে। বুঝলাম দামতুয়া আমাদের জন্য সেজে আছে তার পূর্ণ যৌবনে। খুশিতে সবার মন টগবগ।

প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া একটি পাহাড় নেমে পৌঁছাই দামতুয়া ঝরনার কাছে। দামতুয়া সেজে আছে তার পূর্ণ যৌবন সাজে। বিশাল সাইজের ঝরনাটি সত্যিই দানবাকৃতির। দুই দিক থেকে দুই ঝিরির পানি পড়ে ঝরনার সৌন্দর্যকে করেছে দ্বিগুণ। আর এই রূপটি দামতুয়াকে করেছে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে ঝরনা থেকে খুমের মধ্যে লাফ দিয়ে পড়ার। দামতুয়া ঝরনাটি মূলত সৃষ্টি হয়েছে তুক-অ ঝিরি থেকে। ওই ঝিরিটিও খুব সুন্দর। সবাই গোসলে ব্যস্ত, ভুলেই গেল এখান থেকে ফেরার পথে আমাদের আরেকটি ঝরনা দেখতে হবে, নাম তার ওয়াং-পা। এভাবে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর শেষ হল আমাদের দামতুয়া অভিযান। সামনে এগুতে থাকলাম ওয়াং-পা দেখার জন্য।

বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে যান। নেমে যান চকরিয়ায়। সেখান থেকে ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে যান আলীকদম বাজারে। আলীকদম বাজার থেকে মোটরসাইকেল অথবা চাঁন্দের গাড়ি করে চলে যান আদুপাড়া গ্রামে। মোটরসাইকেল ভাড়া দুজন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা (আপ-ডাউন) আর চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা (আপ-ডাউন)।

আলীকদম বাজারে তিনটি থাকার হোটেল রয়েছে। আলীকদম গেস্ট হাউজ, হোটেল দামতুয়া, হোটেল আলীকদম। আমরা হোটেল আলীকদমে ছিলাম। মান মোটামুটি। পানির ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। আর বিভিন্ন সাইজের রুমের জন্য ভাড়াও বিভিন্ন। তবে ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। অবশ্যই রুম নেওয়ার আগে ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলে নেবেন।

আলীকদম বাজারে মোটামুটি সবকিছুই পাবেন। এছাড়া দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে।

আদুপাড়ায় রয়েছে গাইড সমিতি। গাইড ভাড়া পড়বে ১ হাজার টাকা। টিম মেম্বার কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু গাইডকে ১ হাজার টাকা দিতেই হবে, এটা ফিক্সড।

চেষ্টা করবেন আগেরদিন মোটরসাইকেল বা চাঁন্দের গাড়ি ঠিক করে রাখলে সকালে সময় নষ্ট হবে না। সঙ্গে করে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে যাবেন, মাঝপথের আর্মি ক্যাম্পে চাইতে পারে। আর আর্মি ক্যাম্প ক্রস করার সময় হলো সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা। এর মধ্যেই আপনাকে আসা-যাওয়া করতে হবে। যদি ওয়াং-পা ঝরনা দেখতে চান, তবে অবশ্যই গাইডকে আগে থেকে বলে নেবেন। না হয় পরে ঝামেলা হতে পারে। ট্রেইলে শুকনো খাবার নিয়ে যাবেন। কারণ মাঝখানে কোনো দোকানপাট নেই। এছাড়া জোঁক রয়েছে, তাই সঙ্গে লবণ রাখতে পারেন। যতটুকু দেখলাম ট্রেইলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মনে হয় এখনো খুব একটা ট্যুরিস্ট যায় না। তাই যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে আসেবেন না। সবশেষে ‘হ্যাপি ট্রাভেলিং’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads