দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের পাল্লা বাংলাদেশের চেয়ে চার গুণেরও বেশি ভারি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও, কিছু জটিলতায় তা আটকে আছে। এফবিসিসিআই বলছে, এরই মধ্যে বাণিজ্য বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা থাকবে।
বিপুল জনসংখ্যা আর বিশাল অর্থনীতির দেশ ভারত। প্রতিবেশী হওয়ার দেশটির সাথে প্রচুর আমদানি-রপ্তানি হয় মূলত স্থলবন্দর দিয়েই।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, আগের বছরগুলোতে কম থাকলেও গেল বছর ‘ভারতে মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর এবং শুল্কসহ কিছু জটিলতা না থাকলে রপ্তানি আরো বেশি হতো।
আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভারতের হিসাবে গত অর্থবছরে তাদের কাছ থেকে যেসব দেশ পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নবম। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল পঞ্চম স্থানে। পরিসংখ্যান বলছে, পারস্পরিক বাণিজ্যে এখনো প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের প্রয়োজনেই ভারতীয় পণ্য আমদানি হয় যা দোষের কিছু নয়। তবে আবার বাংলাদেশি অনেক পণ্যও ভারতে রপ্তানি হতে পারে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আশা করছে এবার সে দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফরে রপ্তানি বাধাগুলো আলোচনা করে সমাধান করা হবে। এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, অর্থনীতিবীদ বলছেন ভারতের বিশাল বাজারে রপ্তানি বাড়াতে হলে নতুন উদ্যোগ আর নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশকে রপ্তানি বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন তারা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, করোনার সংক্রমণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তুলনামূলক কম দূরত্বের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উচ্চহারে বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধাও পায় বাংলাদেশ। তবু সে দেশের বাজারের বিশালতার তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় খুবই কম। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) সই নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ যথাযথ দর কষাকষির মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে বলেও মনে করেন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।