• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
ফের কেরানীগঞ্জে রাসায়নিক গুদামে বিষ্ফোরন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

বিস্ফোরনে ক্ষতিগ্রস্থ কেমিক্যাল গুদাম

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

দুর্ঘটনা

ফের কেরানীগঞ্জে রাসায়নিক গুদামে বিষ্ফোরন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  • কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ জানুয়ারি ২০২০

কেরানীগঞ্জে একটি রাসায়নিক কেমিক্যাল এর গুদামে বিকট বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে।

আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে জিনজিরা ইউনিয়নের পূর্ব বন্দ ডাকপাড়া এলাকায় এ বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিষ্ফোরনের শব্দে আশে পাশের চারপাশ কম্পিত হয়ে উঠে। তখন আশ পাশের বাড়ি ঘরের লোকজন ভয়াবহ ভুমিকম্প মনে করে দিক বেদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। রাসায়নিক কেমিক্যাল এর গুদামে বিষ্ফোরনের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ভবন গুলোর জানালার কাচ সহ কাচের সকল জিনিস ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস,পুলিশ, র‌্যাব, উপজেলা প্রশাসন সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসে। উৎসুক কয়েক হাজার জনতা কদমতলী-নবাবগঞ্জ মহসড়কে ভিড় জমায়। তখন সড়কের দুপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় কোন নিহতের ঘটনা না ঘটলেও ছুটোছুটি করতে গিয়ে প্রায় ১০ জনের মতো আহত হয়েছে। তাৎক্ষনিক ভাবে বিষ্ফোরনের কারন জানাতে পারে নি ফায়ার সার্ভিস। ঘটনার পর থেকে ভবন মালিক ও কেমিক্যাল গুদামের মালিক হাজি মো: মারুফ হোসেনের মুঠোফনটি বন্ধ রয়েছে।

বিষ্ফোরিত গুদামের পাশে থাকা বাইজীদ স্টীল আলমীরা কারখানার শ্রমিক মোঃ টুটুল জানায়, এই গুদামঘরটি প্রায় ৮/৯ বছর ধরে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুদামঘরটি দিনের বেলা সব সময় তালাবদ্ধই থাকে। তবে রাতের বেলা নাকি মাঝে মধ্যে খুলে, তখন আমরা থাকি না। তারা কি কাজ করে বলতেও পারি না। আজকে সকালে আমরা আমাদের কারখানায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি বিষ্ফোরনের শব্দ। প্রথমে মনে করেছি বিদ্যুৎ এর ট্রান্সফর্মার বিষ্ফোরিত হয়েছে। এরপর আরো দুটি বিষ্ফোরন ঘটেছে। চারপাশে প্রচুর ধোয়া ও বাজে দুগন্ধ তৈরী হয়। আমরা কেউ কিছু না দেখেই অন্ধকারে দিক বেদিক ছোটাছুটি করে সবাই যে যার মত নিরাপদে চলে যাই। এ সময় আশে পাশের বিভিন্ন বাড়ি থেকে নারী শিশুদের ডাক চিৎকার শুনতে পাই।

সরেজমিন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, কদমতলী নবাবগঞ্জ সড়কে কদমতলীর পাশে পূর্ব বন্দ ডাকপাড়া এলাকায় হাজী মারুফ হোসেনের বিষ্ফোরিত গুদাম ঘর। সেখানে মারুফ হোসেনের তিনটি রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ঘর পাশাপাশি অবস্থিত। গুদামঘর গুলোর পাশেই রয়েছে বসতবাড়ি, স্টীলের আলমীরা তৈরীর কারখান, টিনের সিটের দোকান,একটি কিন্ডার গার্ডেন স্কুল। তিনটি ঘরের আয়তন প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফিট। গুদাম গুলোতে পটাশিয়াম সালফাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাই, সোডিয়াম হাইড্রোসালফেট এর বস্তা এদেকি সেদিক পরে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি গুদাম বিষ্ফোরিত হয়েছে একটি গুদাম অক্ষত অবস্থায় আছে। বিষ্ফোরিত গুদামটিতে প্রায় ১৫ ফিট গর্ত হয়ে গেছে। আশে পাশের অনেক বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে দুই শতাধিক বাড়ি ,অফিস আদালত, মসজিদ এর থাই জানালার কাচ ভেঙে যায়। গুদাম ঘরের পাশেই ইডেন গার্ডেন একাডেমি নামে একটি স্কুল ছিলো। বিকট শব্দে স্কুলের বাচ্চারা ভয় পেয়ে বের হয়ে যাায়।

জিনজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন সাকু জানান, গত সপ্তাহ-দশ দিন আগেই আমি এ কেমিক্যাল গুদাম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। জানার সাথে সাথেই গুদাম মালিককে নোটিশ করে এক সপ্তাহের মধ্যে গুদামটি অনত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলি। গুদামঘরটি সরিয়ে নেওয়ার আগেই এ দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।

ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার (কেরানীগঞ্জ) সাইফুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম দ্রুত এসে ধোয়া নিয়ন্ত্রনে আনি। আল্লাহর রহমতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি আারো বলেন, মালিক পক্ষের কোন লোকজন না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানাযায়নি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত দেবনাথ জানন, ক্ষতিগ্রস্থ অবৈধ গুদাম ঘরের বিষ্ফোরনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। গুদামঘরটি সম্পূর্ন অবৈধ ছিলো।যার কোন ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত ছিলো না। বিষ্ফোরিত গুদাম ঘরের পাশে থাকা হাজী নাসিরের বাড়ি ঝুকিপূর্ন মনে হওয়ায় বাড়ির ভাড়াটিয়াদের আপাতত অনত্র্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, গত ১২ ডিসেম্বর দক্ষিন কেরানীগঞ্জধীন শুভাঢ্যা ইউনিয়নের হিজলতলায় একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর থেকে অবৈধ কারখানা ও গোডাউনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪টি কারখানা আমরা সিলগালা করেছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads