• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

দুর্ঘটনা

আইনেই দায়মুক্তি

বিদ্যুতে দুর্ঘটনার দায় জনতার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০২০

কোনো মানুষ ইচ্ছে করে বিদ্যুতের তার বা খুঁটি স্পর্শ করছে এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবলমাত্র উন্মাদ ছাড়া কেউ বিদ্যুতের তার বা খুঁটি স্পর্শ করে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু মৃত ওই সব ব্যক্তিকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে-এমনটা কখনোই দেখা যায়নি। তার ওপর সম্প্রতি পাস হওয়া নতুন বিদ্যুৎ আইনে দুর্ঘটনার সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির ওপর। বিদ্যুৎ আইনের প্রকাশিত গেজেটে দায়মুক্তির বিধান সংযোজন করায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরো বিপন্ন হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষকে সচেতন করার জন্য কেবলমাত্র একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় এড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও আইন প্রণয়ন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরাতন আইনে জনসাধারণকে সচেতন করার বিধানটি ছিল না। নতুন আইনে সেটি নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আইনেই যদি দায়মুক্তি দেওয়া হয় তাহলে দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তি বিচার চাইতে পারবেন কি না-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিদ্যুৎকর্মীরাও এভাবে মৃত্যুর শিকার হন। আইনের সুযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কোনো রকম ক্ষতিপূরণ না দিয়েই পার পেয়ে যায়। বিদ্যুৎ আইনের গেজেটে বলা হয়েছে, কেন্দ্র বা উপকেন্দ্র পরীক্ষামূলক চালু হওয়ার দিন থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এ বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ মানুষকে খুঁটি বা টাওয়ার অথবা টানা তার স্পর্শ না করতে হুঁশিয়ার করা হবে। এর পরও কেউ যদি স্পর্শ করে আর দুর্ঘটনা ঘটে সে দায় দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তিকে বহন করতে হবে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, শুধু বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারা যাবে না। অনেক পুরনো আইন আবার সংশোধন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়টি আগের মতোই রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই বিজ্ঞপ্তি দিতেই হবে। তবে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ করা জরুরি। টিভিতেও বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়সারা হয়, এরপর দুর্ঘটনা ঘটলে মামলা হয়। সরকারি কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের ওপর দায় চাপায় আর সাধারণ মানুষ নিজেদের বাঁচাতে চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে আরো জবাবদিহির জায়গা রাখা উচিত।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, প্রত্যেকটি লাইসেন্সধারী কোম্পানির প্রথম কাজ হচ্ছে গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এরপর কাজের উদ্যোগ নেওয়া। এ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হবে। আগের আইনে এটা ছিল না। নতুন করে এ বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিয়ে এসেছি। এর অর্থ এই নয় যে কাজ শুরুর পর নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখব না। সেখান থেকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সে কোম্পানিকেই নিতেই হবে। তবে গ্রাহকেরও সচেতন হওয়া দরকার।

উল্লেখ্য, ১৯১০ সালের বিদ্যুৎ আইনটি ২০১৮ সালে এবং সবশেষ চলতি বছর সংশোধন করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর সংশোধিত আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আইনে দায়মুক্তির বিধান সংযোজন করার সুযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানি দায় এড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads