• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
‘বন্ধু পাল্টানো যায় প্রতিবেশী নয়’

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের এক গ্রামে ভারতীয় গোলার আঘাত

ছবি : বিবিসি

এশিয়া

‘বন্ধু পাল্টানো যায় প্রতিবেশী নয়’

# সীমান্তে ৪০০ বাঙ্কার করছে ভারত # শান্তির জন্য আলোচনার বিকল্প নেই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৯

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল তা কিছুটা কমে এসেছে। শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। এই ঘটনার পর বিশ্ববাসী মনে করেছিল সংঘাত বুঝি শেষ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত শনিবার কাশ্মিরের পুঞ্চ এবং রাজৌরিতে ৪০০ অতিরিক্ত বাঙ্কার নির্মাণে সম্মতি দেয় জম্মু-কাশ্মির প্রশাসন। ভারতের দাবি পাকিস্তানের হামলা মোকাবেলায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বাঙ্কারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।  যদিও এ বিষয়ে ভারতের তিন বাহিনী প্রধান আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সতর্কতা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোথাও না পাঠিয়ে স্থানীয়দের যেন ওই এলাকায়  নিরাপদে রাখা যায়, তার জন্য হচ্ছে বাঙ্কার। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের প্রস্তুতি আরো জোরদার করছে নয়াদিল্লিও। শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল মহড়া চালায়। এ ছাড়া সেনার ইস্টার্ন কমান্ড লাইভ ফায়ার ট্রেনিং এক্সারসাইজ করে। সশস্ত্র সামরিক যানকে গুঁড়িয়ে দিতেই তৈরি অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল।

এত কিছুর পর থেমে নেই সীমান্তে গোলাগুলি। সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) টানা আট দিন ধরে গুলির লড়াই চলছে। শুক্রবার রাতভর গোলাগুলিতে সাতজন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান বলেছে দুই সেনাসহ তাদের চারজন নিহত হয়েছেন। ভারত জানিয়েছে তাদের তিনজন নিহত হয়েছেন। অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরত দেওয়ার পরই দুই দেশের সীমান্তে এমন ঘটনা ঘটল। এ ছাড়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষে গতকাল রোববার সকালে বাবাগুন্দ এলাকায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই সিআরপিএফ ও দুজন জম্মু-কাশ্মির পুলিশ। সংঘর্ষের পর গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এদিন সকালে বাবাগুন্দ এলাকায় সন্ত্রাসীরা লুকিয়ে রয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর তল্লাশি অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর উভয়পক্ষে সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময় শুরু হয়।

কাশ্মির ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে দশকের পর দশক ধরে যে সমস্যা চলছে তার সমাধানে স্বশাসনের অধিকার দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতের সাবেক মন্ত্রী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। যদিও কাশ্মিরের জনগণ চায় স্বাধীনতা। কিন্তু চিদম্বরমের মতে, কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই গণভোটের প্রশ্নই ওঠে না। তবে স্বশাসনের অধিকার দেওয়া যেতেই পারে। কারণ নেহেরু গণভোটের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা ছিল অবিভক্ত কাশ্মিরের। বর্তমানে ভারতের হাতে যে কাশ্মির রয়েছে, সেখানে নয়। শনিবার চেন্নাইয়ে নিজের লেখা ‘আনডন্টেড : সেভিং দ্য আইডিয়া অব ইন্ডিয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন। 

তিনি বলেন, জন্মু-কাশ্মির পরিস্থিতি এতটাই পাল্টে গেছে যে, আজ আর সেখানে গণভোটের যুক্তি খাটে না। আমরা কোনোভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মিরের অংশ হাতছাড়া করতে চায় না। কোনো পরিস্থিতিতেই তা হতে দেওয়া যাবে না। কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। তবে সামরিক সংঘাত নয়, বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে বলে মত চিদম্বরমের।

তিনি আরো বলেন, ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই সব ক্ষমতা। পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা একেবারেই ভিন্ন। কেন্দ্রীয় সরকার, সেনা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ভাগ হয়ে গিয়েছে। জইশ-ই- মোহাম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোও যথেষ্ট ক্ষমতাশালী। সরকারের তোয়াক্কা না করেই নিজেদের মর্জিমাফিক কাজ করে তারা। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা করা কষ্টসাধ্য।

তবে আমাদের অটলবিহারি বাজপেয়ীর কথা মনে রাখতে হবে; পরবর্তী সময়ে মনমোহন সিংও যে কথা একাধিকবার বলেছেন- চাইলে বন্ধু পাল্টানো যায়, প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী, চিরকাল তাদের নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তাই আলোচনা ছাড়া পথ নেই। যুদ্ধ কখনো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাই কষ্ট হলেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আর কিছু না হোক, কাশ্মির উপত্যকায় শান্তি টিকিয়ে রাখতে, কাশ্মিরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া উপায় নেই। 

তবে বিজেপি সরকার চলছে একেবারেই ভিন্ন পথে। তারা জানিয়েছে এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই না। তারা শর্ত দিয়েছে পাকিস্তান সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয় তা নিশ্চিত হওয়ার পর তারা এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে। যদিও পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার প্রতিঘাত হিসেবে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা ও জঙ্গি হতাহতের বিষয় নিয়ে খোদ ভারতের মধ্যেই সমালোচনার মুখে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিরোধী রাজনীতিকদের দাবি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোটার টানতেই মোদি বিমান হামলার নাটক করছে। তার এই নাটকের জন্য অনেকের জীবন বিপন্ন হতে পারত।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, অভিনন্দনের মতো ভারতীয় বিমান সেনার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার জন্য দায়ী একমাত্র মোদি। তবে ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোটে গত মঙ্গলবার বিমান হামলায় হতাহতের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হবে না।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতের বিমানবাহিনীর এই হামলা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মাঝে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমনকি অভিযানে হতাহতের সংখ্যা নিয়েও দেখা দিয়েছে সন্দেহ। পাকিস্তান বলছে, ভারতের বিমান হামলায় কোনো হতাহত হয়নি। এদিকে, ভারতের শীর্ষস্থানীয় একজন মন্ত্রী বলেছেন, সরকার ওই অভিযানে হতাহতের ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রমাণ প্রকাশ করবে না। এদিকে ভারতের কাশ্মির নীতির কঠোর সমালোচনা করে একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। গত শনিবার আবুধাবিতে সংস্থাটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। 

শুক্রবার ওআইসির সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার পরদিনই প্রস্তাবটি অনুমোদন করে ৫৭টি ইসলামিক দেশের জোট ওআইসি। এই প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, কাশ্মির ইস্যু একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ। পাকিস্তানের আপত্তি সত্ত্বেও প্রথমবারের মতো ওআইসি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এর প্রতিবাদে সভায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ না দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের আবুধাবিতে পাঠান। ওআইসির সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ভারতের কাশ্মির নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে কাশ্মিরে ভারতীয় বর্বরতা বেড়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ আটক ও গুম বেড়েছে।  ভারত নিরীহ কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে নির্বিচার বলপ্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ করা হয় প্রস্তাবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads