• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

এশিয়া

মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঝরল ৯১ প্রাণ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০২১

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সামরিক বাহিনীর হাতে প্রাণ গেল অন্তত ৯১ গণতন্ত্রকামীর। দিবসটি সামনে রেখে আগেই বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীরা। যদিও সেই আন্দোলনে গেলে মাথা ও পিঠে গুলি করা হতে পারে বলে শুক্রবার রাতে হুঁশিয়ারি দেয় জান্তা সরকার এবং সে অনুযায়ী গুলিও চালায় তারা। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা-অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে শুরু হওয়া টানা বিক্ষোভে গতকাল শনিবারই সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে। খবর : বিবিসি ও সিএনএনের।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপরিচালিত এমআরটিভি নিউজ চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় বলা হয়, আগের জঘন্য মৃত্যুগুলোর ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিক্ষোভে গেলে আপনি মাথা ও পিঠে গুলি লাগার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এর পরও পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে মাথায়, পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার হুমকি উপেক্ষা করে হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসার পর নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়।

ইয়াঙ্গুনে দালা শহরতলির একটি থানার বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। বাণিজ্যিক এ রাজধানীর উত্তর দিকের জেলা ইনসেইনে একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে স্থানীয় একটি অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের এক খেলোয়াড়ও আছেন বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।

মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিওতে ৩ এবং ইয়াঙ্গুনের কাছে বাগো অঞ্চলে ৪ জন নিহত হয়। ইয়াঙ্গুনে সব মিলিয়ে অন্তত ২৪ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হোপিন শহরেও এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। মান্দালয়ে বিভিন্ন ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার নাও। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সের একটি শিশুও রয়েছে। রক্ত ঝরেছে মান্দালয়ের কাছে অবস্থিত সাগাইং এলাকাসহও আরো কিছু অঞ্চলে। সব মিলিয়ে গতকাল মিয়ানমারজুড়ে অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার নাও। তবে নিহতের এ সংখ্যা সঠিক কি না, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্রের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী সিআরপিএইচের মুখপাত্র ড. সাসা বলেছেন, আজ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য লজ্জা দিবস। চার শর বেশি নিরাপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যার পর সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা সশস্ত্রবাহিনী দিবস পালন করছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে মোট নিহতের সংখ্যা চার শ ছাড়িয়েছে।

গতকাল সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে রাজধানী নেপিডোতে সামরিক কুচকাওয়াজে সভাপতিত্ব করার পর মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, তারা গণতন্ত্র রক্ষা করতে ক্ষমতায় এসেছেন। গণতন্ত্রের সুরক্ষায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুরো জাতির সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করতে চায়। নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও কবে তিনি এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন, তার সময়সীমা বলেননি। দাবি আদায়ে সহিংসতার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ঠিক নয়। আমরা মানুষের সুরক্ষা এবং দেশে শান্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। 

যে দাবিতে নৃশংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে, যার ফলে দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে বলে যে কথা রটছে সেটা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কারণ ব্যাখ্যায় হ্লাইং বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির বেআইনি কার্যকলাপের কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। তবে অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেনা পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads