ইসলামি শরিয়া আইনে আফগানিস্তান শাসন করবে তালেবান। সংগঠনটির এক শীর্ষ নেতা ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন রয়টার্সকে। তিনি বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এর কোনো ভিত্তি নেই। আফগানিস্তানে কোন ধরনের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হবে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কারণ এটি স্পষ্ট। আর তা হলো শরিয়া আইন। এটাই শেষ কথা।’
তবে তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের অর্থনীতি, বৈদেশিক নীতিসহ অন্যসব বিষয় কীভাবে পরিচালিত হবে সেসব বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান হাশিমি। এ নিয়ে শিগগির আলোচনা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সম্ভবত দেশের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন। ক্ষমতাসীন একটি কাউন্সিল শাসন পরিচালনা করতে পারে। তেমন কথাই হাশিমি বলেছেন রয়টার্সকে।
এদিকে অতীতের কট্টরপন্থা থেকে সরে এসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নমনীয়তা প্রদর্শন করছে এবারের তালেবান। অনেক কিছুতেই তারা এবার ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে রাজধানী কাবুল দখলের পরপরই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার করে কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে ঘোষণা দেয় কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত তালেবান। একই সাথে, নারীদের লেখাপড়া, চাকরি করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। তবে সবকিছুই ইসলামী বিধান মেনে করতে হবে বলে জানিয়েছে তারা।
অন্যদিকে তালেবান সদস্যদের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নতুন একটি জাতীয় বাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান হাশিমি। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এই সেনাদের বেশিরভাগই তুরস্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে যার যার পদে ফিরে আসতে বলব। সেনাবাহিনীতে সংস্কারের জন্য আমরা অবশ্যই কিছু পরিবর্তন আনব। এরপরও তাদেরকে আমাদের প্রয়োজন আছে এবং আমরা তাদেরকে দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাব।’
আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। এজন্য সবাইকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে তারা। আফগানিস্তানের সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের ‘পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে কাজে ফেরার আহ্বানও জানায় তারা। এমনকি যারা তালেবানের ভয়ে শঙ্কিত তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্ভয়ে কর্মস্থলে ফেরার কথা বলছে তালেবান সদস্যরা।
এদিকে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে আফগানিস্তানের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কাবুলে কিছু নারী ও পুরুষকে কালো, লাল ও সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আফগানিস্তান। দেশটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৯ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।
কুনার প্রদেশের রাজধানী আসাদাবাদে একটি মিছিলের সময় কয়েকজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে গুলিবর্ষণ নাকি পদদলিত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয় বলে মোহাম্মদ সেলিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। তালেবানবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন দিচ্ছেন গণি সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। তিনি গত মঙ্গলবার নিজেকে আফগানিস্তানের বৈধ তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর আগে বুধবার জালালাবাদে পতাকা বিক্ষোভে তালেবানের গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়।
অন্যদিকে অনেক আফগান নাগরিক এখনো দেশত্যাগ করছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন। যেসব আফগান নাগরিক মার্কিন বাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা করেছিল তাদের যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে গত রোববার থেকে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলেও কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে তারা।
চলতি মাসের ৩১ তারিখে মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এই সময়সীমাকে সামনে রেখে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মী, মার্কিন নাগরিক এবং বিগত বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে সহায়তা করা আফগানদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর হামলা এড়াতে তড়িঘড়ি করে নিজ নাগরিক ও কর্মীদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে কয়েকটি দেশ ও সংস্থা। আসন্ন হুমকির মুখে দেশ ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে হাজার হাজার আফগানের ভিড়ও দেখা যায়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ১৫টি দেশ থেকে বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ কাবুলে পাঠানো হয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই সরিয়ে নিয়েছে দুই হাজার যাত্রী। তাদের মধ্যে ৩২৫ জন মার্কিন নাগরিক।