• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০২২

শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেই দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বুধবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুলাস আলহাপেরুমাকে হারিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা না থাকলেও দেশটির পার্লামেন্টের এমপিরা তাকে নির্বাচিত করেন। তিনি পেয়েছেন ১৩৪ ভোট, দুলাস আলহাপেরুমা পেয়েছেন ৮২ ভোট।

কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা গণবিক্ষোভ আর অর্থনৈতিক ধস থেকে শ্রীলঙ্কাকে বের করে আনার দায়িত্বের মুখোমুখি হতে হবে বিক্রমাসিংহেকে। দেশটির আন্দোলনকারীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রনিল বিক্রমাসিংহে আবারও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শান্ত হবে না। এমনকি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

গত সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী মি. বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এবং অন্য সরকারি ভবনগুলোয় ঢুকে পড়ার পর গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপে যান, সেখান থেকে শ্রীলঙ্কায়। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন রাজাপাকসে।

তারা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগও দাবি করছে। তবে সেই দাবিতে কর্ণপাত করেননি মি. বিক্রমাসিংহে। বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কলম্বোয় সরকারি বাড়িতে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ করে।

গত মে মাসেই মি. বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।

প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব পান মি. বিক্রমাসিংহে। বুধবার বিজয়ের অর্থ হলো, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদের বাকি মেয়াদ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব রয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বড় দায়িত্ব পড়ছে মি. বিক্রমাসিংহের ওপর, যার মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে একটি বেলআউট প্যাকেজ জোগাড় করতে পারে।

রাজপাকসে পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ রনিল বিক্রমাসিংহের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এসএলপিপি সমর্থন দিয়েছিল।

অন্যদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনার (এসএলপিপি) নেতা দুলাস আলহাপেরুমা ৮২ ভোট এবং দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকে মাত্র ৩ ভোট পেয়েছেন। একজন সংসদ সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন এবং অপর এক সদস্য সংসদে অনুপস্থিত থাকায় প্রেসিডেন্টের জয়ের জন্য ১১২ ভোট প্রয়োজন ছিল।

দেশকে অর্থনৈতিক পতনের হাত থেকে বের করে আনা এবং কয়েক মাস ধরে চলমান গণবিক্ষোভের পর শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া দায়িত্ব পালন করছেন বিক্রমাসিংহে। এর আগে, গত সপ্তাহে দেশটির আন্দোলনকারীরা বাসভবন দখলে নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান তিনি।

দেশটির বিক্ষোভকারীরা রনিল বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন। গত মে মাসে চরম সংকটের মুখে মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন রনিল। বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাসভবন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দখলও নেন তারা।

তখন থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও এখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া রনিলের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেই দাবির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পদত্যাগ করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গোতাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে যাওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বুধবার সংসদে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আগামী ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।

অনেকেই দেশটির চলমান এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দায়ী মনে করেন। তাদের মতে, রাজাপাকসের ভুল নীতির কারণে শ্রীলঙ্কায় বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটের প্রভাব করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরও প্রবল হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে। দুই দশকের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে গত মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেলআউটের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই আলোচনা আপাতত থমকে গেছে। এখন দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে পুনরায় আইএমএফের সাথে বেলআউটের আলোচনা শুরু করাই হবে বিক্রমাসিংহের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো একই ধরনের বৈশ্বিক প্রতিকূলতা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads