• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
খেলাপি ঋণে লাগাম পরানো কঠিন

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

অর্থহীন প্রমাণিত অর্থমন্ত্রীর কথা

খেলাপি ঋণে লাগাম পরানো কঠিন

সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৯

অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা করেন দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। অবশ্য বিশ্লেষকরা অর্থমন্ত্রীর এমন কথার যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি তখনই। তারা বলেছেন, খেলাপি ঋণে লাগাম পরানো কঠিন। তবে এটি যাতে ব্যাপক আকারে না বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে পারলেই হবে।

অর্থমন্ত্রীর কথা ও খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবমতে, দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে অবলোপন করা ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।

হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। খেলাপি ঋণের হার ও পরিমাণ দুটিই বেড়েছে চলতি বছরের জুন থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ কোটি টাকা। জুনে ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। মার্চ থেকে জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সরল সুদে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেক গ্রাহক এর আওতায় এরই মধ্যে আবেদন করেছেন। আবেদনের আওতায় আসা ঋণগুলো পুনঃতফসিল করার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের এই হালনাগাদ তথ্য বেরিয়ে এলো। 

গত জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১৩৫ কোটি টাকা কমে ৫৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকায় নেমেছে। সেটি সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২২ কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ছিল চার হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

বিদেশি ব্যাংকগুলোতে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের হিসাব দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৬ দশমিক শূন্য এক শতাংশ খেলাপি। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো একই সময়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৩৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে তাদের মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৫৪ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা খেলাপি। অর্থাৎ মোট ঋণের ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ খেলাপি। চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে গত ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপি হওয়া ঋণ মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট বা এককালীন জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ নিতে পারবে ৯ শতাংশ। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও শেষ পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকার সম্পদ ব্যবস্থা কোম্পানিকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। পৃথিবীর অনেক দেশে এই প্রথা কার্যকর রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads