• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
শাপলায় জীবিকা নির্বাহ শত পরিবারের

শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের শত শত পরিবার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

শাপলায় জীবিকা নির্বাহ শত পরিবারের

  • সালাহউদ্দিন সালমান, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)
  • প্রকাশিত ০২ অক্টোবর ২০১৮

শাপলার রয়েছে একাধিক ভেষজ গুণ। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে খেতেও সুস্বাদু। শাপলা কেউ খায় শখ করে, আবার কেউ খায় অভাবে পড়ে। শাপলা সাধারণত লাল ও সাদা রঙের হয়। এর মধ্যে সাদা ফুলবিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহূত হয়। শাপলা খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সাধারণত শাকসবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাত গুণ বেশি। সাদা শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্যও বেশ উপকারী। লাল শাপলা অ্যালার্জি ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। শাপলা প্রধানত অ্যাসিডিটি, অ্যানেসথেসিক, সেরোটিক, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে ব্যবহূত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল দিয়েও চমৎকার সুস্বাদু খই তৈরি হয়।

আর সেই তাজা শাপলা বিক্রি করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত পরিবার। কৃষিজমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান ও পাট ক্ষেতে শাপলা ব্যাপকভাবে জন্মেছে। এ ছাড়াও এলাকার ইছামতী খালের বিলের পানিতেও শাপলা ফুল ফুটেছে সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে।

শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন বেশি পাওয়া যায় না। এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকেরা ভোর থেকে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া চর নিমতলা রামানন্দ ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং শেষ করে দুপুরের দিকে।

লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. ওয়াজুদ্দিন মিয়া জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মোঠা (৬০টি শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করেন। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে নিয়ে পরে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

উপজেলার দনিয়াপাড়া গ্রামের পাইকার মোহন মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়তদারি খরচ ২ টাকাসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৭ টাকা মোঠা, কিন্তু পোস্তগোলা থেকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছানো পর্যন্ত ৪-৫ জায়গায় পুলিশকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে গাড়ি আটক করে রাখে। যদি পুলিশকে টাকা না দিতে হতো, তাহলে ব্যবসাটা ভালোই ছিল।

শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। গত কয়েক বছর যাবৎ এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই সংসার চালাচ্ছেন।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি গোলাম মোর্শেদ তালুকদার বলেন, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে আমাদের হাইওয়ে কোনো পুলিশ, কোনো গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করে না। পোস্তগোলা জুরাইন এটা আমার এরিয়ার বাইরে, এখানে কারা টাকা-পয়সা নেয় তা আমার জানা নেই।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads