• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কলার মোচায় জীবন চলে

পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুর গ্রামের ওসমান খাঁ

ছবি : এম এ বশার

সারা দেশ

কলার মোচায় জীবন চলে

  • এমএ বশার, বাউফল
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০১৮

পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুর গ্রামের ওসমান খাঁ। বয়স সত্তরোর্ধ্ব। তার জীবন চলে অনেক কষ্টে। ওসমান খাঁ জীবিকার তাগিদে জঙ্গলের/বুনো শাকসবজি হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। শুধু ওসমান খাঁ নন, তার মতো অনেকেরই কলার মোচা, জঙ্গলের কচুর লতি, শাপলা, ঢেঁকিশাক, কলমি, হেলেঞ্চা, হাইচার মতো বুনো শাকসবজিতে সংসার চলে। গ্রামে রাস্তার পাশে, বাগানে, ঝাড়-জঙ্গলে কিংবা পুকুর-ডোবায় যা অনেকের কাছে জঞ্জাল মনে হয় তা-ই তাদের জীবিকার অবলম্বন।

নিয়মিত বের হন ওসমান। রাস্তার পাশে ঝোপঝাড় এবং বিলঝিলের ধারে জীবিকার উপকরণ খোঁজেন। কোথাও কলার মোচা কিংবা শাপলা ফুটেছে কি না কিংবা ঝোপঝাড়ে কোথাও উঁকি দিচ্ছে কি না লতাপাতার ফাঁকে ঢেঁকিশাক- তা খোঁজ করে চলেন তিনি। রাস্তার পাশের গাছে কলার মোচা, ঝোপঝাড়ে ঘোমটা পরা আধ-ফোটা বৌ-ঢেঁকিশাক আর বিলের পানিতে শাপলার হাসিতে হাসির ঝিলিক ওঠে ওসমানের ঠোঁটে।

সার-বিষে ফলানো শাকসবজিতে মুখ ফেরানো শহর-বন্দরের লোকজনের কাছে কলার মোচাসহ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এসব সতেজ বুনো শাকসবজির চাহিদা বেশি। দামও পাওয়া যায় ভালো। তাই কখনো খালি গায়ে রোদে পুড়ে আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে গ্রামের মেঠো পথের পাশে, বিল-ঝিল, বাগান-জঙ্গলে বের হন তিনি। কলার মোচা আর বুনো এসব শাকসবজি বিক্রির টাকায় সংসার চলার পাশাপাশি অসুস্থ স্ত্রী রেনু বেগমের ইট ভাঙার মতো কাজের কিছুটা উপশম হবে এই ভরসায় ছুটে চলেন ওসমান খাঁ। সামনে এগিয়ে যাওয়ায় তার পথচলা।

দক্ষিণ সুলতানাবাদ গ্রামের আরসিসি ব্রিজ এলাকায় দেখা হলে ওসমান খাঁ জানান, ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, বয়সের ভারে ন্যুব্জ সেও। নিয়মিত ওষুধপত্র কেনার টাকাপয়সা জোটে না তার। ভিটিসহ স্থানীয় মাপের ২-৩ কড়া (৭-৮ শতাংশ) জমি আছে। দুই ছেলে মনির ও সাগর যে যার মতো ছেলে-মেয়ে-সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বড় মেয়ে রীনার বিয়ে হয়ে গেছে। বয়স অনেক বেশি হলেও কাকডাকা ভোর থেকেই ছুটতে হয় তাকে। সংসার চালাতে এসব শাকসবজি তুলতে পাড়ি দিতে হয় গ্রামের পর গ্রাম। গ্রামের হাটে-বাজারে চাহিদা না থাকলেও এক হালি বড় সাইজের স্থানীয় জাতের কলার মোচা পৌর সদরসহ কালাইয়া, নুরাইনপুর বন্দরের বাজারে বিক্রি হয় ২০-২৫ টাকায়। এক আঁটি কচুর লতি (এক কেজি) বিক্রি হয় ১৫-২০ টাকা ও কলমি শাক তিন-চার আঁটি বিক্রি হয় ১০-১২ টাকায়।

তিনি জানান, বয়স্ক ভাতাও জোটেনি তার। শরীর না চাইলেও কলার মোচা কাটতে কাঁচি বাঁধা টুক্কা (কোডা) নিয়ে বের হতে হয় রাস্তার পাশে সংসারের খাই-খরচ চালাতে। শাপলা তুলতে নামতে হয় পানিতে। বর্ষায় জঙ্গলে আগের মতো ঢেঁকিশাক ফোটে না। জলায় কলমিও মেলে কম। বর্ষা শেষে ঘরসংসার চালাতে কষ্ট হয় তার। করতে হয় কৃষিভিত্তিক নানা কাজ। সহযোগিতা পেলে কম পরিশ্রমের কোনো ব্যবসা কিংবা কাজে জড়িয়ে থাকার ইচ্ছা তার।

পৌর সদরের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম সু-স্টোরের মালিক মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘ঘর-সংসার চালাতে ওসমান খাঁ রাস্তার পাশে গাছে গাছে কলার মোচা ও বনজঙ্গলের শাকসবজি কুড়িয়ে বেড়ান। আবার তা বেচতে ছুটে আসেন সদরের বাজারে। আত্মসন্মান বোধের কারণে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়াচ্ছেন না। সমাজে তার মতো অসহায় বয়োবৃদ্ধ মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads