• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
পীরগঞ্জের বাকীর বদলে যাওয়ার গল্প

নিজের রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন পীরগঞ্জের আবদুর রহমান বাকী

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

পীরগঞ্জের বাকীর বদলে যাওয়ার গল্প

  • পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০১৮

রংপুরের পীরগঞ্জের গঙ্গারামপুর গ্রামের আবদুর রহমান বাকী। পুতুল খেলার ছলে কেটেছে তার শৈশবকাল। বয়সের কোটা যখন বারোতে তখন ব্যস্ত ছিলেন নাচে-গানে আর যাত্রাদলে। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে প্রায়ই মঞ্চ নাটকে মেয়ে চরিত্রে অভিনয় করতেন। রঙে ঢঙে মঞ্চ মাতিয়ে আনন্দ দিতেন দর্শকদের।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে বাকীর আচার-আচরণে। শুরু হয় মেয়েলী স্বভাবের আচরণ আর সাঁজ গোজ। এতে হতাশ হয় বাকীর পরিবার। গ্রামের মানুষের ঠাট্টা আর উপহাসে ঘর ছাড়া হতে হয় তাকে। আদর সোহাগ বঞ্চিত বাকী সমাজের কাছে পরিচিত হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে।

হিজড়া শব্দের বেড়াজালে থাকা অবহেলিত বাকী অন্য হিজড়াদের মতো নয়। সে মানুষকে অতিষ্ট করতে পছন্দ করত না। কাউকে জিম্মি টাকা নেওয়াকে খারাপ মনে হত বাকীর চোখে। তাই নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে কাজ খুঁজতে থাকেন। এক সময় নিজ গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমায়। কাজ খুঁজে নেয় পীরগঞ্জ সদর উপজেলা সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারে। সেখানে কিছুদিন ঝাড়–দারের কাজ করেন। পরে তার ব্যবহারে মুগ্ধ সরকারি কর্মকর্তারা তাকে দিয়ে রান্না করে নেন। এভাবেই সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারে জীবনের ১৮টি বছর কেটে যায় বাকীর। ওই সময়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হয়ে ওঠে সে।

বর্তমানে বাকী নিজেই পীরগঞ্জ কলেজ রোডে হোটেল ব্যবসা শুরু করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘আদর-সোহাগ হোটেল’। সেখানে চার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন তাদেরকে ১২’শ টাকা করে হাজিরা দেয়া হয়। ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই হোটেলটি চলছে। হিজড়াদের ব্যাপারে অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতেই নিজেকে কাজের সঙ্গে জড়িয়ে এভাবেই বদলে নিয়েছেন।

তৃতীয় লিঙ্গের আবদুর রহমান বাকী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। সে পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গঙ্গারাম গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। পিতাহারা পরিবারের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বাকী সবার বড়। অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী বাকী এখন মডেল। কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করা বাকী গ্রামে কৃষি জমি কিনেছেন। নিজের উপার্জিত অর্থে বিয়ে দিয়েছেন ছোট ভাই-বোনদের।

পীরগঞ্জের কলেজ রোডে কবি হেয়াত মামুদ কিন্ডার গার্টেন এর সম্মুখে ‘আদর-সোহাগ হোটেল’ এ কথা হয় বাকীর সঙ্গে। ৪৮ বছর বয়সী বাকী জানান, সে সরকারী অফিসার্স কোর্য়াটারে ১৮ বছর বাবুর্চির কাজ করেছেন। কোর্য়াটারের অফিসারদের কাপড় ধুয়ে দিতেন। অনেক কষ্টে সেখানে থাকতেন।  অফিসারদের খুশি করতে পারলে মাঝে মধ্যে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বকশিস পেতেন। বকশিসের জমানো সেই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের শাড়ি, ব্লাউজ, জামা ও প্রসাধনী কিনে নিতেন। সময় পেলে প্রায়ই ছুটে যেতেন মঞ্চে।  এসময় অনেক হিজড়ারা তার কাছে আসত। 

তিনি বলেন, আমি পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়নি। জীবনের সাথে সংগ্রাম করেছি। সামান্য বেতনে সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারে কাজ করে নিজেকে বদলে নিয়েছি। সেই বেতন থেকেই সে পরিবার পরিজনকে সাহায্য করেছি। গ্রামে জমি কিনেছি। শুধু নিজের ওপর জেদ করেই আজকে এ পর্যায়ে এসেছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads