• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর জেলে সত্তরোর্ধ্ব শিক্ষক

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা পাওয়া সাজামুক্ত শিক্ষক আজমত আলী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর জেলে সত্তরোর্ধ্ব শিক্ষক

  • প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর ২০১৮

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা পেয়েও বাদীর কূটকৌশলে ৯ বছর ধরে কারাগারে ধুঁকছেন সত্তরোর্ধ্ব শিক্ষক আজমত আলী। সাধারণ ক্ষমার মুক্তির তথ্য গোপন করে বাদী সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করায় জেলেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন সাজামুক্ত এই শিক্ষক। তার মুক্তির পথ চেয়ে আছে পরিবারের সদস্যরা। বাবার মুক্তির আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সন্তানরা। আইনি জট খুলে আদৌ কি মুক্তি পাবেন আজমত আলী— সে প্রশ্নই এখন স্বজন-প্রতিবেশীদের।

আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারাগারের নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের পহেলা এপ্রিল জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পাখিমারা গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধে লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হন রেজাউল করিম (২০)। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর মারা যান তিনি। ৬ এপ্রিল নিহতের বাবা কলিমুল্লাহ সরকার বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় শিক্ষক আজমত আলীকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালত আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আওতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখা-২-এর স্মারক নং-৬/পি ৭০/১০ কারা/২ আদেশের ৩ ও ২ অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৯৬ সালের ২১ অক্টোবর মুক্তি পান আজমত আলী। এ ছাড়া মুক্তির আগে তার করা হাইকোর্টের আপিলে ২০০৫ সালের ২ মার্চ ওই মামলায় খালাসও পান তিনি।

কিন্তু মামলার বাদী কলিমুল্লাহ সরকার রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় আসামি আজমত আলীর মুক্তির বিষয়টি গোপন করে সুপ্রিম কোর্টে লিপ টু আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট আসামিকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে পুলিশ ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর আজমত আলীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। সেই থেকে ৯ বছর যাবত আইনি বেড়াজালে কারাগারে আটক রয়েছেন শিক্ষক আজমত আলী। এদিকে এক বছর আগে মামলার বাদী কলিমুল্লাহ সরকারও মারা গেছেন।

শিক্ষক আজমত আলীর মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮) বলেন, ৭০ বছর বয়সে জেলের ভেতরে নানা জটিল রোগে ভুগছেন আমার বাবা। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বাবার মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছি না। রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তির কাগজপত্রাদি দেখে আমার বাবার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিচার বিভাগ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি। বাবার অবর্তমানে পরিবারের দুরবস্থার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

মামলার আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আদেশে মুক্তির পর হাইকোর্টে লিপ টু আপিল করা যায় না।’ বাদী কূটকৌশলে তথ্য গোপন করে লিভ টু আপিল করেন। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের দৃষ্টিগোচর হলে লিভ টু আপিল গ্রহণ করত না সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে একাধিকবার জেলা দায়রা জজের কাছে আবেদন করেছি। জেলা দায়রা জজ ২০১২ সালের ৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর অত্র আদালতের নিষ্পত্তিকৃত দায়রা মামলা নং ৪১/১৯৮৮ এর আসামি মো. আজমত আলীর অব্যাহতির বিষয়ে নির্দেশ প্রদান প্রসঙ্গে দাফতরিক চিঠি পাঠিয়েছেন।

জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মুখলেছুর রহমান কারাগারে আজমত আলীর আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েদি আজমত আলী নয় বছর যাবত জেলে রয়েছেন। তার বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করছে। আমরাও চাই তার মুক্তি হোক।

 

শওকত জামান, জামালপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads