• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
সাতক্ষীরায় নাগরিক জীবন বিষিয়ে তুলেছে ইজিবাইক

সাতক্ষীরা শহরে ইজিবাইক ও ব্যাটারীচালিত ভ্যান যানজট সৃষ্টি করে

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

সাতক্ষীরায় নাগরিক জীবন বিষিয়ে তুলেছে ইজিবাইক

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০১৮

সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় ১০ হাজার ইজিবাইক আর ব্যাটারিচালিত ভ্যান প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের গতি থামিয়ে দিয়েছে। অবৈধ এই দুটি বাহন যানজটের পাশাপাশি প্রায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নাগরিক জীবন বিষিয়ে তুলেছে। গায়ে গায়ে লেগে থাকা ইজি বাইকের জন্য ফুটপাথ বিহীন রাস্তায় হাঁটাচলা করাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক বছরে অনভিজ্ঞ চালকের বেপরোয়া এসব ইজি বাইকের চাপায় চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, যুবক, শিশুসহ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত এসব ভ্যানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বার বার ফিরে আসে সেই পুরানো দৃশ্য।

সাতক্ষীরা শহর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইজিবাইকের চেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর উপযুক্ত ব্রেকবিহীন ব্যাটারিচালিত ভ্যান। ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ভ্যান পুরো পৌর শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হাঁটু পর্যন্ত লুঙ্গি উঠিয়ে শিশু-কিশোর থেকে নানা বয়সের চালক রিকশার হ্যান্ডেলে এক পা তুলে বেপরোয়া গতিতে যাত্রী বহন করছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি নতুন (ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইজিবাইক) পৌর এলাকার রাস্তায় নামছে।

সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব অবৈধ যান চলাচল বন্ধে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যাটারিচালিত ভ্যানকে বিপজ্জনক যান হিসেবে চিহ্নিত করে পৌর এলাকায় চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে মাইকে প্রচারও চালিয়েছে, কিন্তু এসব ভ্যানের চাকা থামেনি।

মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ‘চোর পুলিশ’ খেলে। পুলিশ ব্যাটারি খুলে নেয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ভ্যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুদিন পরই ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’ এর মতো অবস্থা’। এদিকে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইক চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করায় শহরে যানজটের নিরসন হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার সচিব বলেন, ‘আমরা ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করে না। ’

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের রানা, সোহেল, মিজান,তুলি,আরিফা ও রেহানা পারভীনসহ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী বলেন, ‘চার্জার ভ্যান উঠলে বুক কাঁপে। কিন্তু উপায় নেই। ফুটপথ না থাকায় পায়ে হাটাও যায় না। যে কারণে বাধ্য হয়ে চার্জার ভ্যানে উঠতে হয়। ’

পলাশপোল এলাকার সোহরাব আলী জানান, যানজটের কারণে শহরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত দুই মাস আগে তার সামনেই ইজি বাইক ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ওষুধ কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসার নিহত হয়।

সাতক্ষীরা সরকারি গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী পূজা রানী সরকার বলেন, উল্টো পথে ‘ইজিবাইক এসে তার জেঠাকে চাপা দেয়। তিনি এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সাতক্ষীরা বিআরটি এর সহকারী পরিচালক বলেন, ‘ইজিবাইক, অটোরিকশার ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন টেকনিক্যাল পার্সন হিসেবে বলতে পারি, ভ্যানে ইঞ্জিন লাগালে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ভ্যানের গতি বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু এর ব্রেক সিস্টেম ডেভেলপ করা হচ্ছে না।’

সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘শহরের যানজট নিরসনের জন্য আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করি। ব্যাটারি খুলে নিই। রিকশা, ইজিবাইক এসব ডাম্পিং করার দায়িত্ব পৌরসভার। আমাদের নয়।’

সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক কমিটির নেতা এ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ‘ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান সাতক্ষীরা শহরের যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এটি পৌর শহরের ঐতিহ্যকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এ দুটি বাহন নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে এর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহম্মেদ চিশতী বলেন, ‘শহরে ব্যাটারিচালিত ভ্যান বন্ধের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ট্রফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে পৌর এলাকায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads