• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশ হাজার দোকান!

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশ হাজার দোকান!

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশ হাজার দোকান!

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০১৯

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে দোকানপাট খুলে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। আনুমানিক ২০ হাজার দোকানের মালিক এখন রোহিঙ্গারা। নিয়ম না থাকলেও নির্দ্বিধায় তারা ব্যবসা করে যাচ্ছে। দিন দিন তারাও প্রভাবশালী হয়ে উঠছে সে কারণে। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর সহায়তায় ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছে রোহিঙ্গারা। এসব দোকানে বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ত্রাণসামগ্রী কেনাবেচা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রোহিঙ্গারা বিপুল টাকার মালিক হচ্ছে, তেমনি লাভবান হচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীও। কারণ রোহিঙ্গাদের দোকান থেকে তারা রোজ ইজারা বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভেতরে-বাইরে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রায় সব দোকানই পরিচালনা করছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় প্রভাবশালী ফজলুল কাদের ভুট্টু নামে সাবেক এক মেম্বারসহ আরো অনেক প্রভাবশালী রোহিঙ্গাদের দোকান করতে দিয়ে নিয়মিত ইজারা আদায় করছেন। দৈনিক ৪০ হাজার টাকা চাঁদা উঠছে এসব দোকান থেকে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা দোকানের অবকাঠামো তৈরি করে রোহিঙ্গাদের দিচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গারা দোকান করছে আর প্রভাবশালীরা নিয়মিত ইজারার নামে টাকা নিচ্ছেন।

উখিয়ার বালুখালী বি ৯ নম্বর পান বাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় আকারের দোকান খুলেছেন রোহিঙ্গা আবদুস সবুর (৫০)।  তার দোকানে অন্তত ১০ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী রয়েছে। প্রতিদিন লাখ টাকার উপরে বেচাকেনা হয় তার দোকানে। প্রায় ৫ মাস ধরে তিনি এই দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। ক্যাম্পের বিভিন্ন বাসাবাড়ি বা এজেন্ট থেকে মালামাল সংগ্রহ করেন। কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রাহক আসে তার কাছ থেকে মালামাল নিতে। রোহিঙ্গাদের থেকে সংগ্রহ করা এসব মালামাল গ্রাহকরা বাইরে একটু বেশি দামে বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পে অন্তত ১ হাজার  দোকান আছে। সবই রোহিঙ্গাদের।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকের রোহিঙ্গা দোকানদার মোস্তাক আহামদ বলেন, এখানে কয়েকশ দোকান আছে। আমরা মিয়ানমারেও দোকান করতাম। প্রথমে এসে দেখেছি অনেকে দোকানপাট করছেন। পরে আমিও দোকান করেছি। অনেক টাকা পুঁজি খাটিয়েছি এখানে। ব্যবসাও বেশ ভালো চলছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশে বেশ ভালো আছি। মিয়ানমারেও আমরা এত হাসিখুশি ছিলাম না। এখন অনেক ভালো আছি আমরা। তবে মিয়ানমারে যতদিন তাদের ঘরবাড়ি ফেরত দেওয়া না হবে, ততদিন তারা সেখানে ফিরবেন না বলেও জানান।

বালুখালী ৯ নম্বর ব্লকে কর্মরত মরিয়ম আক্তার নূপুর বলেন, আমাদের ক্যাম্পে পথেঘাটে দোকান বসিয়েছে রোহিঙ্গারা। এর ফলে ঠিকমতো হাঁটাও যায় না। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলাও যায় না। তারা এখন স্থানীয়দের চেয়ে প্রভাবশালী।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের মালিক রোহিঙ্গারা। তারা মাথার শ্যাম্পু থেকে শুরু করে নখ কাটার মেশিন পর্যন্ত ফ্রি পাচ্ছে। সপ্তাহে একবার চাল, ডাল থেকে শুরু করে সবকিছু এনজিও থেকে পায় তারা। সেগুলো তারা বাইরে বিক্রি করে দেয়। তাদের বেশিরভাগই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিছু রোহিঙ্গা বাইরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। যার ফলে তাদের এখন টাকার অভাব নেই।

টেকনাফ কলেজের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নয়, বাজারের সর্বত্র রোহিঙ্গারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। বাজারের যেখানেই যাই, সেখানেই দেখি রোহিঙ্গারা ব্যবসা করছে। রোহিঙ্গারা যদি এত বেপরোয়াভাবে নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করতে পারে, তাহলে একদিন সেটা আমাদের জন্য খুবই খারাপ হবে।

উখিয়ার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ সিকদারের দাবি, ক্যাম্প ইনচার্জের বদৌলতেই ক্যাম্পের ভেতরে সব অনিয়ম হচ্ছে। সেখানে কোনো এনজিও কাজ করতে গেলে আগে ক্যাম্প ইনচার্জের মন জয় করতে হয়। সেখানে বেশিরভাগ দোকান করে রোহিঙ্গারা। সেসব দোকান থেকে মাসিক ভাড়া তোলাও হচ্ছে। একটি পক্ষ মাসিক মাসোহারা দিয়েই এসব কাজ করছে। প্রশাসনিক ইন্ধন না থাকলে এখানে কোনো অনিয়ম সম্ভব নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

উখিয়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের ব্যবসা লাটে ওঠার অবস্থা। আমরা গাড়ি ভাড়া দিয়ে কক্সবাজার থেকে মালামাল আনি। তারা ত্রাণের মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করতে আনে। ফলে রোহিঙ্গারা এখন বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুতুপালং ক্যাম্পের ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, আমি যোগদান করার আগে থেকেই দেখছি অনেক রোহিঙ্গা এখানে দোকান দিয়ে ব্যবসা করছে। এটা সত্যি উদ্বেগজনক। বেশিরভাগ দোকানই রোহিঙ্গাদের। কিন্তু এসব দোকান বা মার্কেট করে দিয়েছে স্থানীয়রা। সুতরাং রোহিঙ্গারা এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করার পেছনে স্থানীয়রাই দায়ী। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে এক মেম্বার সরকারি পাহাড় কেটে বড় আকারের মার্কেট করছেন। মার্কেটের দোকান রোহিঙ্গাদের ভাড়া দেবেন।

 এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা বেশি হারে দোকান করাটা সমস্যার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads