• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিমের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

ফরিদগঞ্জে ওরস মাহফিলের তবারক খেয়ে অসুস্থ সহস্রাধিক

স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিমের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

  • মহিউদ্দিন আল আজাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর পুর্ব ইউনিয়নের উভারামপুরে ওরস মাহফিলের তবারক খেয়ে প্রায় সহস্রাধিক লোক অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকায় শনিবার এ সংক্রান্ত প্রকাশের পর শনিবার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম শিপনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা অসুস্থ হওয়া রোগীদের আতংক না হয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। শনিবার দিন বিকালে বিশেষ টিম দুইশত লোককে চিকিৎসা দিয়েছেন। এ ছাড়া রোববার ও সোমবার পাশ্ববর্তী মুন্সীরহাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশেষ চিকিৎসা সেবা দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়।

সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: আলী আফরোজ ও ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে শনিবারও মতলব আন্তজার্তিক উদরাময় গবেষনা কেন্দ্রে (মতলব কলেরা হাসপাতালে) মাহফিলের তবারক খেয়ে অসুস্থ হওয়া লোকজন চিকিৎসা নেয়ার জন্য হাজির হয়েছে। রবিবার সকালে ওই হাসপাতলে খবর নিয়ে জানাযায়, এখনো ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬০ থেকে ৭০জন অসুস্থ্য রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

জানা গেছে, গত ৭৬ বছর ধরে প্রত্যেক বছর ৯ জানুয়ারী উভারামপুর পাটওয়ারী বাড়ীর আয়োজনে স্থানীয় উভারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ওরস ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মাহফিলে ফরিদগঞ্জ ও পাশ্ববর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাহফিলে অংশ গ্রহণ করেন। মাহফিলে শেষে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে তবারুক বিতরণ করেন। কিন্তু তবারুক খেয়ে অংশগ্রহণকারী প্রায় সহ¯্রাধিক নারী পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে গত দুই দিনে মতলব দক্ষিণ উপজেলা আন্তজার্তিক উদরাময় গবেষনা কেন্দ্রে (মতলব কলেরা হাসপাতাল) ৬শতাধিক লোক চিকিৎসা সেবা নেয়।
যার মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলারই শতাধিক লোক চিকিৎসা নেয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

অসুস্থরা জানায়, তেহেরী (ডাল, গরুর মাংস, মসলা) জাতীয় খাবার খাওয়ার ৪/৫ ঘন্টা পর থেকে কয়েক অনেকেরই বমি ও পাতলা পায়খানা হতে শুরু করে। এদের মধ্যে বেশীরভাগ নারী, পুরুষ ও শিশু প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে ও পাশ্ববর্তী এলাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যে শুক্রবার ৬ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরা হলেন, সাফায়েত হোসেন (০২), সুরুঙ্গচাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী সাবিনা বেগম, চৌরাঙ্গা গ্রামের আঃ হাইয়ের মেয়ে সুমাইয়া (১৬), শাহরাস্তির ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে মোঃ হোসেন (৩৬), হাজীগঞ্জের নাটেহরা গ্রামের মৃত আঃ হকের ছেলে আঃ সামাদ, একই গ্রামের আঃ সামাদের স্ত্রী মমতাজ (৩৬) ।

সিএনজি স্কুটার চালক আবুল কাশেম জানান, গত দুই দিনে তিনি নিজেই তবারক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া অন্তত ৩০জন রোগীতে মতলব কলেরা হাসপাতালে এনেছেন। একই কথা জানিয়ে সিএনজি স্কুটার চালক বিল্লাল , সোহাগ, মোর্শেদসহ আরো অনেকে জানান, গত দুই দিনে আমরা ওরসের তবারক খেয়ে অসুস্থ হওয়া লোকজনকে বহন করছি।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আবুল সাদেক কাশেম জানান, তিনি গত দুই দিনে অন্তত তিন শতাধিক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।

মাহফিল কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, মাহফিলে তেহেরী রান্নায় ব্যবহৃত পানি ও অন্যান্য উপকরণ পরীক্ষার জন্য চাঁদপুরে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাও. শারাফাত উল্ল্যা জানান, গত ৭৬ বছর ধরে উভারামপুরে এ ঐহিত্যবাহী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারই প্রথম তবারক খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তবারক খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, খাবার প্যাকেটজাত থাকায় খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের টিম আক্রান্তকারী ছাড়াও স্থানীয় লোকজনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads