• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
জীবন নিয়ে সংশয়ে রোগীরা

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি মেশিনটি ১৪ মাস ধরে অচল

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

দেড় বছর ধরে বাক্সবন্দি থেরাপি মেশিন

জীবন নিয়ে সংশয়ে রোগীরা

  • বরিশাল ব্যুরো
  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরনো থেরাপি মেশিনটি নষ্ট। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আনা নতুন ব্রাকি থেরাপির আরেকটি মেশিন। সেই মেশিনটি দেড় বছর ধরে হাসপাতালে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া জরায়ু ক্যানসারের মেশিনটিও অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুচিকিৎসা না পাওয়ায় তাদের জীবন নিয়ে সংশয়ে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোবাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়।  যার মূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৩ বছরে এই মেশিন দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ ক্যানসারের রোগীকে ৯ হাজার বার রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বরে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রাকি থেরাপির অপর একটি মেশিন। সেটিও দেড় বছর ধরে হাসপাতালে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। সম্প্রতি রেডিওথেরাপি মেশিনের পাশের কক্ষে বসানো জরায়ু ক্যানসারের মেশিনটিও ঠিকমতো স্থাপন না করায় সেটিও অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে লিমহুমা ক্যানসার রোগে আক্রান্ত ঝালকাঠির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম।  বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের থেরাপির একটি মেশিনটি নষ্ট ও আরেকটি বাক্সবন্দি থাকায় গত সাত মাস ধরে ঢাকায় এসে থেরাপি নিচ্ছেন। একই যন্ত্রণায় ভুগছেন আরো ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি তাদের।

রোগীর স্বজনদের  সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্দিষ্ট সময় পর পর ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে রেডিওথেরাপি দিতে হয়। তা না হলে ক্যানসার ছড়িয়ে রোগীর মৃত্যু হয়। বরিশালে রেডিওথেরাপি দেওয়ার এখন কোনো সুযোগ না থাকায় রোগীরা এ রোগের যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীরা মহাখালী ক্যানসার ও রিসার্চ সেন্টার হাসপাতালে থেরাপি নিচ্ছেন। কিন্তু একটি থেরাপি দেওয়ার পর রোগীরা পরবর্তী সিরিয়াল পাচ্ছেন ৫-৬ মাস পর। এতে করে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে তাদের নির্দিষ্ট সময়ের থেরাপি নিশ্চিত করতে হয়। যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই তারা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। কোনো তদবির লবিংয়ের ব্যবস্থা করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে নিতে পারছেন না প্রয়োজনীয় থেরাপি।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান তড়িৎ কুমার সমাদ্দার জানান, রেডিওথেরাপি মেশিনটি সচল করতে বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা না হওয়ায় রোগীরা মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে সিরিয়াল দিচ্ছেন। কিন্তু সেখান থেকে যে সিরিয়াল দেওয়া হচ্ছে তাতে অনেক রোগী সে সময় পর্যন্ত বাঁচবে কি না তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মহসীন হাওলাদার বলেন, বরিশালসহ পদ্মা নদীর এপাড়ে যতগুলো হাসপাতাল রয়েছে তার কোনোটিতেই রেডিওথেরাপি মেশিন নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার সেন্টার থাকা দরকার। এর বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, নতুন থেরাপি (ব্রাকি থেরাপি) মেশিনটি বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরমাণু শক্তি কমিশন জানিয়েছে একই স্থানে দুটি মেশিন থাকতে পারবে না। থাকলেও দেয়াল দিয়ে পার্টিশন তৈরি করে নিতে হবে। এ কারণে পরমাণু শক্তি কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন মেশিনটি বসানো হবে। তবে জরায়ু ক্যানসারে থেরাপি দেওয়ার মেশিনটির কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads