• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কলমাকান্দায় কর্মরত ব্যতিক্রমী ইউএনও জাকির

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

কলমাকান্দায় কর্মরত ব্যতিক্রমী ইউএনও জাকির

  • কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় সাধারণ মানুষ অনেক সময় প্রশাসনের সেবা থেকে বঞ্চিত হন! এলাকায় সরকারি সেবা পাওয়া আর সোনার হরিণ মনে হয় সমান।

দিনের পর দিন ঘুরে কাজ করাতে না পেরে মানুষ আস্থা হারাচ্ছে সরকারি দফতর ও কর্মকর্তাদের উপর। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছেন। তেমনই একজন ব্যাতিক্রম সরকারি বিসিএস কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন, যিনি বর্তমানে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

হাওর, সমতল ও পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত কলমাকান্দা উপজেলা। একটু প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় অনেক অফিসাররাই এখানে থাকতে চান না। সেজন্য হয়তো সাধারনের সঙ্গে তাদের দূরত্বও কমেনি কখনো। কিন্তু ভালো কাজ, ভালো ব্যবহার আর ভালোবাসা দিয়ে ইতোমধ্যেই জাকির হোসেন জয় করে নিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মন। ক্ষমতাবান মানুষ থেকে শুরু করে সাধারন দিনমজুর সবার কথা তিনি শোনের মনোযোগ সহকারে। সাধারণের জন্য নিজের অফিসের দ্বার অবারিত করতে তিনি নিয়েছেন ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।

সাধারণত যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসের দরজা ডিঙাতে না পারায় দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ প্রশাসনের সেবা থেকে বঞ্চিত হন। উপজেলা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই দূরত্ব কমাতে জাকির হোসেন নিজের কার্যালয়ের সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন একটি নেইমপ্লেট। সেখানে লেখা রয়েছে ‘অফিসে প্রবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই, এ অফিস আপনাদের।

’ এ নোটিশ টাঙানোর পর বেশ সাড়া পড়েছে এলাকাতে। যে কোনো প্রয়োজনে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে কড়া নাড়ছে নির্বাহী কর্মকর্তার দরজায়। নিজেদের কষ্টের কথা তারা বলছেন তাদের প্রিয় ইউএনও'র সাথে। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা পেয়ে যাচ্ছেন।


এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে গত ডিসেম্বরে মো. জাকির হোসেন নিজ কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেখেছেন একটি সংরক্ষিত চেয়ার। অন্যান্য চেয়ারের পাশাপাশি লাল রঙের একটি চেয়ার। আর ওই চেয়ারটিতে সাঁটানো রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লগো। এমন ব্যাতিক্রমী উদ্যোগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়া মুক্তিযোদ্ধারাও খুব খুশি। তারা অনেকেই জানালেন এমন ঘটনা আমাদের দেশে বিরল। মো.জাকির হোসেনের মতো সরকারি কর্মকর্তারাই একদিন বদলে দেবেন আমাদের দেশ। উনাদের মহতি উদ্যোগেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

নিজের এমন সব উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকারি অফিসগুলো তৈরি করা হয় জনসাধারণের কাজের জন্য। আমি যদি আমার অফিসে প্রবেশের জন্য কাউকে বাধা দিই, অফিসের ও সাধারণ মানুষের মাঝে পর্দা দিই, দেয়াল তুলি, তাহলে তারা কীভাবে সেবা নেবে। আমরা চাই জনসাধারণের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো দূরত্ব থাকবে না। জনসেবার জন্যই আমাদের প্রশাসন। আমার এখানে সেবা নিতে এসে অনেকেই অনুমতি চান। আমার অফিসে আসার জন্য অনুমতির কেন প্রয়োজন পড়বে?’

তিনি আরো বলেন, ‘আগে আমার অফিসের সামনে অনেক লোক জড়ো হয়ে থাকতো। ভয়ে অনেকে ভেতরে প্রবেশ করতো না। এখন সবাই নির্ভয়ে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অফিসে কথা বলতে আসে। কেউ আসেন সামাজিক সমস্যা কিংবা অভিযোগ নিয়ে। দরিদ্র মানুষরা বয়স্কভাতা, বিধবাভাতার জন্য আসেন। কৃষক আসেন জমিতে সেচ যন্ত্র স্থাপনের ছাড়পত্রের বিষয়ে। ’

মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত করার বিষয়ে তিনি জানান, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানের জন্য প্রতীকী চেয়ার সংরক্ষণের এটি একটা নতুন উদ্যোগ। প্রত্যেক উপজেলায় এমনিভাবে একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হলে যেমন দেশের প্রতি দেশাত্মবোধ জাগবে তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পাবে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম লিখেন, সহকর্মী জাকির হোসেন তার অফিস কক্ষে জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি আসন সংরক্ষণ করেছেন। প্রয়াস সামান্য কিন্তু গুরুত্ব অপরিসীম। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এই শ্রদ্ধা প্রদর্শন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও চেতনা বিকাশে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তার এই শুভ উদ্যোগের জন্য আমার পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ।

সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের কলমাকান্দা উপজেলার ইতিহাসে এমন জনবান্ধব ইউএনও আমরা কখনও দেখিনি। উনি অল্প কয়েকদিনে যেভাবে সকলের ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছেন, এই দেশ একদিন উনার মতো ভালো লোকের কারণেই উন্নতির শিখরে আরোহন করবে। উনি আছেন আমাদের উপজেলার সকল মানুষের হৃদয়ে।

মো.জাকির হোসেনের জন্ম গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায়। পড়ালেখা করেছেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৩ সালে নড়াইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। ২০১৮ সালে ৪ অক্টোবর থেকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংযুক্ত ছবি :

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads