• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা রোহিঙ্গা শিবিরে

রোহিঙ্গা শিবির

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা রোহিঙ্গা শিবিরে

  • মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০১৯

গাদাগাদি করে বসবাসরত রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, অগ্নিনির্বাপণের জন্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা জনসংখ্যা অনুপাতে অপ্রতুল। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনা নির্যাতন ও জাতিগত নিধনের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে উখিয়ার ১৮টি ক্যাম্পে বসবাস করছে দেড় লাখ পরিবারের ৮ লাখ রোহিঙ্গা। সরেজমিন উখিয়ার বৃহত্তম কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে নির্মিত পলিথিনের ঘরগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি সংযুক্ত। তারপরও ৮ হাত দৈর্ঘ্য ও ৫ হাত প্রস্থের এসব খুপরি ঘরে যেখানে রান্নার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার কাজ চলছে।

লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আলি আহমদ মাঝি বলেন, পলিথিনের ছায়ায় ছেলেমেয়েরা প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে। গরমে অতিষ্ঠ শিশুরা টিউবওয়েলের পানিতে শরীর ভিজিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এতে ছেলেমেয়েরা রোগে আক্রান্ত হলেও মারা পড়ছে না। যদি অসাবধানতাবশত ক্যাম্পের কোনো একটি ঘরে আগুন লেগে যায় তাহলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু মারা পড়বে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

মধুরছড়া রোহিঙ্গা মাঝি শামশুল আলম জানান, ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আগুন আতঙ্কে দিন পার করছে। দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো পলিথিনে আগুন লাগলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়বে বিশাল রোহিঙ্গা শিবিরে। এলাকাজুড়ে যদি আগুনের বিস্তৃতি ঘটে তাহলে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। কেননা রোহিঙ্গা শিবিরে যানবাহন ঢোকার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরে বহুতল ভবনে একের পর এক আগুনের ভয়াবহতায় রোহিঙ্গারা শঙ্কিত। কুতুপালং ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, তারা ২০১২ সালে নাফ নদী পার হয়ে কুতুপালং বনভূমির জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত তাদের ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে, যা তারা নিজেরাই নেভাতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, ক্যাম্পের অনভিজ্ঞ অসংখ্য পরিবার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। তারা জানে না কীভাবে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না শেষে তা নেভাতে হবে। অনভিজ্ঞতার কারণে সেখান থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে রেড ক্রিসেন্ট রোহিঙ্গাদের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা দিয়ে কোনো উপকারে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত নিয়ন্ত্রণে তারা আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তাই ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। যদি তারা সঠিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি অবগত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় অগ্নিনির্বাপণের জন্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আগেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদেরকে সজাগ এবং যথাসময়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অবহিত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads