• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ মেয়র নাছিরের অস্বীকার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ মেয়র নাছিরের অস্বীকার

গৃহায়নকর্মীদের কর্মবিরতি

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০১৯

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ হিসেবে কর্মবিরতিতে গেছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগর ভবনে মারধরের ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। তবে মেয়র নাছির বলছেন, এ ধরনের কিছু ঘটেনি। ‘বেয়াদবি’ করায় তাকে ‘বকাঝকা’ করেছেন কেবল।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। চট্টগ্রাম সার্কেলের অধীনে ১৬টি জেলা কার্যালয়েও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে বলেও জানান তারা। জানা গেছে, একটি সড়কের পাশে নালা নির্মাণ বিষয়ে বিরোধ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে সোমবার রাতে নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে গিয়েছিলেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের ছয় কর্মকর্তা। ওই দলে থাকা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আশ্রাফুজ্জামানের অভিযোগ, সড়কের পাশে ‘অবৈধ দখল’ বিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে মেয়র ও এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকে মারধর করেন।

এই অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে নগর ভবনে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে পুরো ঘটনাটি তুলে ধরেন মেয়র নাছির। তিনি বলেন, মূলত ওই জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তারা সড়ক নির্মাণের জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছিল, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ তা সিটি করপোরেশনকে দেয়।

মেয়র বলেন, কিন্তু পুরো জমি যে সড়কের জন্য, সেটা গোপন করে তারা ১২০ ফুট জমি আমাদের দিয়েছিল। এরপর ২০১০ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সে সময়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গৃহায়নের চেয়ারম্যান বরাবর রাস্তার পাশে কাঁচাবাজার বসানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। তবে অনুমোদন পায়নি।

মেয়র বলেন, সড়কের পাশে ঝুপড়ি আকারে একটি কাঁচাবাজার ছিল। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে সেটা একবার এবং এরপর আরো ৩-৪ বার উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে পোর্ট কানেকটিং সড়ক সম্প্রসারণ হচ্ছে এবং সড়কের পাশের অংশে ড্রেন করা হচ্ছে। পুরো সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ। শুধু ওই অংশ ছাড়া। সেখানে গৃহায়নের লোকরা বাধা দিচ্ছে। এটা আমি জানতাম না।

সিটি মেয়র ওই এলাকার সড়কের একটি মানচিত্র সংবাদকর্মীদের দেখিয়ে বলেন, গৃহায়নের লোকজন আবাসিক এলাকা দিয়ে ঘুরিয়ে ড্রেন করার কথা বলছিল। ড্রেন সোজা না হলে পানি ফুলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে। ফোনে এ বিষয়ে কথা হলে তাদের আমি সন্ধ্যায় অফিসে আসতে বলি।

অডিটোরিয়ামে (বৈঠকে) আমাদের এস্টেট শাখার একজন বলেন, উনারা (গৃহায়ন) ড্রেন ঘুরিয়ে দিতে চান। তখন পেছন থেকে একজন (আশ্রাফুজ্জামান) বলে ওঠেন, আপনি আপনার মতো বললে হবে না কি? আমরা ১২০ ফুটই হস্তান্তর করেছি।

মেয়র নাছির বলেন, তখন তিনি (আশ্রাফুজ্জামান) এগিয়ে আসেন কথা বলার জন্য। আমি বললাম, এতদিন তো সেখানে বাজার ছিল, কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন? উত্তরে সে বলে, ‘সিটি করপোরেশনের জায়গা হকারদের দখলে আছে না? এটা তো তার বিষয় না। সে বেয়াদবি করেছে। বেয়াদবি করার দুঃসাহস তাকে কে দিল? বাজার বসিয়ে সেখান থেকে তারা নিয়মিত আয় করত।

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেয়র নাছির বলেন, তাকে বকাঝকা করেছি। মারধরের প্রশ্নই আসে না। অপরাধ আড়াল করার জন্য এখন নানা কথা বলছে।

ঘটনাটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মন্ত্রী মহোদয়কে ঘটনা জানিয়েছেন। আশা করি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। সরকারি কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। আমরা সরকারি প্রটেকশন চাই। সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

তিনি বলেন, যেকোনো কাজে সমস্যা হলে সরকারিভাবে সমাধান করা যায়। আঘাত করা নীতিবিরুদ্ধ।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশ বলেন, বড়পোল বরফকল এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তৈয়বের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সন্ধ্যায় নগর ভবনে গিয়ে মেয়রের সাথে দেখা করতে বলেন। মাস্টারপ্ল্যানে পোর্ট কানেটিং রোডের ওই অংশ ১২০ ফুট আছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন সড়ক সোজা করার কথা বলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আরও ৫০ ফুট জায়গা দখলে নিয়ে কাজ করছে। এজন্য কোনো অনুমতি নেয়নি।

তার ভাষ্য, সোমবার সন্ধ্যায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ তারা ছয়জন নগর ভবনে গিয়ে দ্বিতীয় তলায় অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় তৃতীয় তলায় অডিটোরিয়ামে সভায় ছিলেন মেয়র। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তৈয়ব তাদেরকে সেখানে নিয়ে যান। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমাকে কথা বলতে বলেন। তখন আমি অনুমতি নিয়ে বলি, সড়কের পাশের ওই জায়গা সবুজায়নের জন্য রাখা আছে। জবাবে মেয়র বলেন, ‘এটা অবৈধ দখলে ছিল, আমরা উচ্ছেদ করেছি, তখন হাউজিং (গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ) কোথায় ছিল? আমি বলি, ‘আপনি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেন তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। মাঠপর্যায়ে আমরা খুব চাপে থাকি। আর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমিই তো দখলে থাকে। আমরা একে একে উচ্ছেদ করছি। এরপর উনি উত্তেজিত হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের জমি কোথায় অবৈধ দখলে আছে দেখান?’ তখন আমি চুপ করে থাকলেও তিনি বলতে থাকেন, ‘বলেন কোথায় আছে, বলতে হবে।’ তখন আমি বাধ্য হয়ে বলি, ‘ফুটপাতে অনেক অবৈধ দখলদার দোকান আছে।’

এরপর উত্তেজিত অবস্থায় মেয়র চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে তাকে গালি দেন এবং একপর্যায়ে চড় মারেন বলে অভিযোগ পলাশের।

পলাশ বলেন, মেয়র জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাড়ি কোথায়?’ জবাবে বাড়ি গোপালগঞ্জ বলার পর তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পাশে থাকা ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ সময় ধাক্কা দিয়ে আমাকে অডিটোরিয়াম থেকে বের করে করিডরে নিয়ে আসেন। করিডরে কাউন্সিলর ও মেয়র মিলে আবার মারধর করেন। একপর্যায়ে করপোরেশনের কর্মচারীদের বলে ‘একে বেঁধে রাখ, পুলিশ আসলে পুলিশে দেব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads