• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা

নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন জেলেরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ মে ২০১৯

মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরা। তবে প্রত্যাশিত ইলিশ মিলছেনা জেলেদে জালে। কাঙ্খিত ইলিশের দেখা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন জেলার অর্ধ লক্ষাধিক জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। যদিও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, আষাঢ়ের শুরুতে নদীতে মিলবে দেখা মিলবে ইলিশের। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরম ও  নদীর নাব্যতা সংকট থাকায় নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ।

মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ১ মে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য জাল নিয়ে ছুটছে জেলেরা। কিন্তু জেলেদের জালে ইলিশ ইলিশের দেখা নেই খুব একটা। দীর্ঘ সময় নদীতে জাল বেয়ে যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে- তা দিয়ে নৌকার খরচের পয়সাই উঠছে না তাদের। আগে করা জেলেদের কর্জের টাকা পরিশোধ করা দূরে থাক, নিত্যদিনের খাবার জোটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলেদের। একই সঙ্গে রমজান মাস শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ আরো বেড়েছে তাদের।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৫১ হাজার ৯৮৯ জন জেলে। জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এই সময়টাতে নদীতে সকল প্রকার জাল ফেলা নিষিদ্ধ ছিল।

জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিষেধাজ্ঞার সময় এসব জেলেদের চার মাস ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয় সরকারিভাবে। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে জেলেরা বিভিন্ন এনজিও ও দাদনদারের কাছ থেকে ঋণ করে পরিবারের খরচ চালিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ধরা মাছ বেঁচে ঋণ পরিশোধ করার স্বপ্ন থাকলেও বাস্তবের চিত্র ভিন্ন।

হাইমচরের নলের চরের জেলে জামাল বলেন, দুই মাস পরে নদীতে মাছ শিকার করতে নেমেছি। কিন্তু ইলিশের দেখা নেই জালে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে যেই পরিমাণের মাছ পাওয়া যায় তা দিয়ে খরচের টাকাই ওঠে না। পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষন চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। চাল, ডাল কিনতে পারলেও ইফতার সামগ্রী কিনতে পারি না।

হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী এলাকার জেলে রহমত মিয়া বলেন, রমজান মাস চলায় সংসারে স্বাভাবিকের চেয়ে খচর অনেক বাড়তি। কিন্তু নদীতে মাছের দেখা নেই। নিষেধাজ্ঞার সময়ে অনেক টাকা ঋণ করে সংসার চালিয়েছি। নদীতে মাছ ধরে ঋণের টাকা পরিশোধ করাতো দূরে থাক চাল কেনার টাকাই থাকে না। স্ত্রী সন্তানদের জন্য ইফতার ও সেহেরীতেও ভালো কোন খাবার কিনতে পারি না।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। আড়তে মাছের আমদানী অনেক কম তাই দাম কিছুটা বেশি।

তিনি বলেন, এক একটি জেলে নৌকায় ৮ থেকে ১০ জন জেলে থাকে। নদীতে মাছ ধরা কম পড়ায় সকল খরচ শেষে জেলেদের লাভ তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া রমজান মাস চলায় জেলেদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। তাই অনেকটা মানবেতর জীবন যাপনই করছে তারা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, এখন নদীতে ইলিশ খুব বেশি না পেলেও কিছু দিন পরেই জেলেরা অনেক মাছ পাবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, এবছর জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম ভালো হয়েছে। প্রচুর পরিমাণ জাটকা নদীতে বিচরণ করেছে। জীবন চক্রের অংশ হিসেবে ইলিশ এখন সমুদ্রে চলে গেছে। জুলাই মাস থেকেই আবার ইলিশ নদীমূখী হয়ে উঠবে। আর তখনই জেলেদের জাল ভরে উঠবে রূপালী ইলিশে। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে জেলেদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হলেও এখন আর কোন সহায়তা করা হবে না বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads