• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

আর্সেনিক ঝুঁকিতে দেশের ৭ কোটি মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সর্বোচ্চ আর্সেনিক দূষণের শিকার। গবেষণায় দেখা গেছে,  বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই মাটির নিচের পানিতে অধিকমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। সে অনুসারে ধারণা করা হয়, দেশের প্রায় ৩.৫ কোটি থেকে ৭ কোটি মানুষ ক্রনিক আর্সেনিকোসিস ঝুঁকিতে রয়েছে। যেখানে আমাদের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৬ কোটি এবং বাংলাদেশের লক্ষাধিক আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী রয়েছে, যাদের চূড়ান্ত পর্যায় ক্যানসার।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) পরিচালিত আর্সেনিক নিয়ে এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী আর্সেনিক দূষণ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। পৃথিবীর সব মহাদেশের পঞ্চাশটির মতো দেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সীমিত পরিমাণে পাওয়া গেলেও সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে এর প্রকোপ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্সেনিক হলো ধূসর আভাযুক্ত সাদা রং বিশিষ্ট একটি উপধাতু। প্রকৃতিতে আর্সেনিক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে মনুষ্যসৃষ্ট কার্যাবলি যেমন অক্সিডেশনের ফলে আর্সেনিক ভূগর্ভস্থ পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছে। আর সেই পানি নলকূপের মাধ্যমে তুলে পান করে বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্সেনিকজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আর্সেনিকোসিসের মূল কারণ ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও জৈব আর্সেনিকযুক্ত (যেমন- শস্যকণা, শাকসবজি, মাংস, দুধ ইত্যাদি) খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ, যা নীরব ঘাতকের মতো মানবদেহের বহু ক্ষতি সাধন করে থাকে।

২০১৭ সালে কিছু নির্বাচিত উপজেলার ১০ হাজার অধিবাসীর ওপর চালানো এক গবেষণায় ৮৭০ জন ব্যক্তি আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ ও নারী ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ আক্রান্ত রোগী ৩১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। বর্তমানে এরা আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করায় ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করায় কিছুটা সুস্থ রয়েছেন।

চিকিৎসকদের মতে, আর্সেনিক রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে ত্বকে কালো কালো দাগের মাঝে সাদা সাদা দাগ যা বৃষ্টির ফোঁটার মতো দেখায়, ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ, হাত ও পায়ের চামড়ার পুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া। তাছাড়া এ গবেষণায় প্রায় ১৬ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের চামড়ার ক্যানসার অথবা ক্যানসার পূর্ববর্তী লক্ষণে আক্রান্ত ছিলেন আর্সেনিকোসিসের কারণে।

সম্প্রতি বিএসএমএমইউ পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে পাওয়া গেছে আর্সেনিকোসিসে রক্তশূন্যতা ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ, শারীরিক দুর্বলতা ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্বসন তন্ত্রের সমস্যা ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, হূদরোগজনিত সমস্যা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর মাঝে পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বিদ্যমান। আবার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন লিভার, ব্লাডার ক্যানসারও পাওয়া গেছে।

বর্তমানে ৮১ দশমিক ১ শতাংশ রোগী আর্সেনিক সহনীয় মাত্রার পানি পান করছে। অথচ তারা আর্সেনিকজনিত বিভিন্ন প্রকার রোগের লক্ষণ ও ক্যানসার নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন। দিন দিন সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আর্সেনিক সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। তাই প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে কীভাবে আমরা আর্সেনিক সংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হব এবং এর কার্যকরী প্রতিকার করব?

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার জানান, আর্সেনিকোসিস নিরাময়ের কোনো সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত হয়নি। চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ হলো আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এছাড়া ভিটামিন এ, সি, ই, স্পিরুলিনা ইত্যাদি সম্পূরক হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় এসব প্রদান করে উপকার প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া হাত-পায়ের পুরুত্বের চিকিৎসায় বিভিন্ন মলম (যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইউরিয়া) ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ক্যানসারের চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads