• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
নুসরাত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মনির স্বামীর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

নুসরাত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মনির স্বামীর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল

  • সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর ২০১৯

ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১৬ আসামির একজন হলেন তার সহপাঠী কামরুন নাহার মনি। দেশব্যাপী আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার রায় গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। আদালত মনিকে হত্যার পরিকল্পনা করা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও বোরকা কেনার অভিযোগে এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

কারাবন্দি মনি গত ২১ অক্টোবর একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। রায়ের পর মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকায় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রায়ের পর মনির স্বামী রাশেদ খান রাজু তার নামে ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে শনিবার রাতে আবেগঘন স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:-

আমার আমানত, আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়ে পিবিআইর বানানো মিথ্যা জবানবন্দি দিয়ে আজ ফাঁসির আসামী তুমি। তোমার কাছে আমার আমানত এতোই বড় ছিলো যে যাকে তুচ্ছ করে তুমি সত্যের সাথে থাকতে পারোনি। যেদিন রিমান্ডে তোমার পেটে আমার বাচ্ছাটাকে ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করে দিবে বলেছিলো সেদিন নিশ্চয়াই ভেবেছো তোমার জীবনের চেয়েও তোমার বাচ্ছার জীবন অনেক মূল্যবান।

হ্যাঁ মা হিসেবে তোমার দায়িত্ব বোধকে আমি সম্মান করি শ্রদ্ধা করি, পৃথিবীর সকল মাই জীবন দিয়ে হলেও তাদের সন্তান রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু যে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে তুমি মিথ্যা জবানবন্দি দিয়ে আসামী হয়েছো আজ সেই মেয়ে কোলে নিয়েই তোমাকে ফাসির রায় শুনতে হলো। তোমার মেয়ের কথা কি আজ এই দেশ চিন্তা করেছে?

তোমাকে যে পরিমান নির্যাতন করে, পিটিয়ে, পেটে তারের আঘাত করে, হাতের পায়ের তালুতে পিটিয়ে, জামা কাপড় খুলে ফেলার চেষ্টা করে ও সর্বশেষ বাচ্ছা নষ্ট করার ভয় দেখিয়ে আসামী করলো তা কি এই দেশের কেউ জানে? তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ার পরেও যে তোমাকে ফাঁসি দেওয়া হলো তা কি এই দেশের কেউ জানে? এই সন্তান কে নিয়ে যে এদেশের মানুষ ট্রল করে, সন্তানের বাবা ও পিতৃ পরিচয় নিয়ে ট্রল করে না জেনে তাকি জানো? তুমি যে ঘটনার পরে ৩টা সহ মোট ৬ টা পরিক্ষা দিয়েছো আর ঘটনার দিনের পরিক্ষা সহ সবগুলাতেই এ প্লাস পেয়েছো সেই খবর কেউ রেখেছে? তুমি খুন করে কিভাবে স্বাভাবিক ছিলা বা ঘটনার দিন ও তার পরের ৩টা পরিক্ষা সহ মোট ৬ টাতেই এ প্লাস পেতে পারো সেটা কি কেউ চিন্তা করেছে? কেউ কি জানে যে অন্য আরো একটি মনি ছিলো যে কিনা সিরাজের পক্ষ নিয়ে নুসরাতের বিরুদ্ধে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলো। তাকে যে পিবিআই গ্রেপ্তার করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিছে তা কি দেশের কেউ জানে?

অবশেষে বলবো আমার কলিজার সন্তান একদিন এই দেশে মাথা উচু করে দাড়াবে, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ তাকেই করতে হবে।তোমার মৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করতে দেশ কি এই জন্য স্বাধীন করেছিলো কিনা যেখানে তোমরাই আজ পরাধীন। আজ জাতীর কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম এই মা মেয়ে যদি নির্দোষ হয় আপনাদের কি আল্লাহ এর আদালতে জবাবদিহি করতে হবেনা?

আবারও বলছি, বুক ফুলিয়ে বলছি মনি ১০০ ভাগ নির্দোষ ।আমি আমার ভালোবাসাকে অন্যায়ের কাছে হেরে যেতে দিবোনা। লড়বো এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই আমি লড়বো ইনশাআল্লাহ। মুবাশশিরা খানম ‘রাথী’ এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দেশের ইতিহাসে। দেশের আর কোন নারী যেন এমন বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতার শিকার না হয় সেটাই কামনা করি।

স্ট্যাটাসের সত্যাতা নিশ্চিত করে রাজু বলেন,নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পূর্বের রাতে ডায়রিয়া ও পেট ব্যথার কারণে সকালে মনিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর পরীক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে এসেছিলাম। পরে পিবিআই সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে ড্রিল মেশিন দিয়ে পেটের সন্তান নষ্ট করার হুমকি দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেন। আমার বিশ্বাস মনি এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে না। আশা করছি হাইকোর্টে আপিল করে ন্যায় বিচার পাবো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads