• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাণিজ্য নগরীতে রূপ নিচ্ছে স্বর্ণদ্বীপ মহেশখালী

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

বাণিজ্য নগরীতে রূপ নিচ্ছে স্বর্ণদ্বীপ মহেশখালী

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ নভেম্বর ২০১৯

মেক্সিকোর মতো বাণিজ্য নগরীতে পরিণত করতে কক্সবাজারের স্বর্ণদ্বীপ মহেশখালীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার একর জমি নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে এ পর্যন্ত সব চেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে এগুলো। যা অতীতের কোনো সরকারের আমলে তা গৃহীত হয়নি। এসব মেগা প্রকল্পের কাজগুলোর বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম গঠন দরকার হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে এ দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দ্বীপের ৩টি প্রধান সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় ৫০ শতাংশই খানাখন্দকে ভরপুর হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ভিআইপি এসব সড়ক দিয়ে একবার যাতায়াত করলে দ্বিতীয়বার এ সড়কে পা বাড়ায় না। এই হচ্ছে সড়কের বাস্তব অবস্থা। সড়কগুলো হচ্ছে জনতাবাজার-মাতারবাড়ী সড়ক। জনতাবাজার ভায়া শাপলাপুর গোরকঘাটা সড়ক। জনতাবাজার ভায়া কালামার ছড়া গোরকঘাটা সড়ক। এ ৩টি সড়কের মধ্যে শাপলাপুর গোরকঘাটা সড়কটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে। বাকি ২টি সড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। বর্তমানে মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে (সওজ) অংশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি প্যাকেজের অধীনে নির্মিত হচ্ছে, ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক, ৬৮০ মিটার পিসি গার্ডার সেতু এবং ৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ-কাম সড়ক নির্মাণ ও স্লুইচ গেট নির্মাণ। ধলঘাটা দ্বীপের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মহেশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কোহেলিয়া নদীতে নির্মিত হচ্ছে ৬শ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু। এসব কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে দ্বীপ মহেশখালীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগ ক্ষেত্রে। এ অভিমত অবহেলিত দ্বীপবাসীর।

ওই প্রকল্পগুলোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ কোহেলিয়া নদীতে সেতু নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ বর্তমানে চলছে। এ ব্রিজে পিলার থাকবে ১২টি ও স্প্যান থাকবে ১১টি। ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার পাকা সড়কটির প্রস্থ হবে ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার। ৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ-কাম সড়কের প্রস্থ হবে ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার, ওই বাঁধের উচ্চতা হবে ৬ মিটার। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হবে একটি বড় স্লুুইচ গেট। এসব কাজের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে, হাল্লা মীর আক্তার জয়েন্টভেঞ্চার। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের গত ২৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে রাজঘাট থেকে মুহুরীঘোনা পর্যন্ত ৭.৩৫ কিলোমিটার বাঁধ-কাম সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এসব কাজে তদারকি কর্মকর্তা যথাসময়ে উপস্থিত না থাকার কারণে কাজে পুকুর চুরির সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা। 

প্রসঙ্গত, আজ থেকে ২৪০ বছর আগে ১৭৭৯ সালে মহেশের নামকরণে মহেশখালী দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় তখন দ্বীপের আয়তন ছিল ১৮৮ বর্গকিলোমিটার। কালের বিবর্তনে সোনাদিয়া, ধলঘাট ও মাতারবাড়ী উপদ্বীপ মহেশখালীর সঙ্গে সংযুক্তি হলে, দ্বীপের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ বর্গকিলোমিটারে। ২২১ বছর ধরে মহেশখালী দ্বীপটি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে ২০০০ সালের ১৭ জুন চকরিয়ার বদরখালী ও মহেশখালী জনতা বাজারের মধ্যাংশে মহেশখালী চ্যানেলের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে মহেশখালীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর মহেশখালীকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ আর বলা যাচ্ছে না।

মহেশখালী দ্বীপের আয়তন দিন দিন বাড়ছে। ১৭৭৯ সালে মহেশখালী চ্যানেলের গড় গভীরতা ছিল ১৫ থেকে ৩৩ মিটার। বর্তমানে এর গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে, মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটার। এর কারণ হিসেবে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদী থেকে বর্ষার সময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি এসে মহেশখালী চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যৎ কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলার মহেশখালী চ্যানেল লাগোয়া অংশটুকু মহেশখালীর সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। এ অভিমত ভূরূপতত্ত্ব গবেষকদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads