• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষের শ্রম বেচা-কেনার হাট

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য সমবেত হয়েছেন কৃষি শ্রমিকরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মানুষের শ্রম বেচা-কেনার হাট

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৯

কুমিল্লার বিভিন্ন হাটবাজারে এখন মানুষের শ্রম বেচা-কেনা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভাবী মানুষ দলে দলে এ সকল হাট-বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য আসেন। এদের শ্রম বিক্রয় হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে। এ হাটে মানুষের শ্রম বেচা-কেনা নিয়ে চলে দরকষাকষি। দু’পক্ষের মধ্যে বেচা-কেনা তথা মজুরীর ব্যাপারে দফা-রফা হবার পর শেষ হয় বিক্রি পর্ব। শ্রম বিক্রি করা এসব অভাবী মানুষগুলো অবস্থা সম্পন্ন জোতদার, মহাজন, অবস্থা সম্পন্ন কৃষকের সাথে পিছু পিছু তাদের বাড়ি যান। সাথে থাকে নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের কাপড়- চোপড়ের পুটলী, ধান কাটার কাস্তে, কাটা ধান বহনের উপযোগী বাঁশের লাঠি।

কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা বাজার, সূয়াগঞ্জ বাজার, বিজয়পুর বাজার, লালমাই বাজার, বুড়িচং উপজেলা নিমসার বাজার, চান্দিনা বাজার, সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজার সমূহে ধান কাটা মৌসুমে ও ধানের চারা রোপনের মৌসুমে মানুষের শ্রম বেচা-কেনার হাট বসে। এ সকল বাজারের মধ্যে পদুয়ার বাজার, শুয়াগঞ্জ বাজার, চৌয়ারা বাজার, নিমসার বাজার, লালমাই বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, দেবিদ্বার বাজার, মুরাদনগর বাজার, বাঘমারাসহ বিভিন্ন বাজারে মানুষের শ্রম বেচা-কেনার জন্য বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ধান কাটা ও ধানের চারা রোপনের মৌসুমে প্রতিদিনই এ সকল বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য ভীড় করে শত শত শ্রমজীবী মানুষ। পণ্যের মত বিক্রি করে তাদের শ্রম।

ধানকাটা ও ধানের চারা রোপনের মৌসুমে এ শ্রমজীবীদের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময়টায় মজুরী ও বাড়ে সমান তালে। ভর মৌসুমে প্রতিজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী নির্ধারন হয় ৬০০ শত টাকা থেকে ৭০০ শত টাকায়। মৌসুমের কাজ কমে আসলে মজুরী নেমে আসে ৪০০ শত থেকে ৫০০ শত টাকায়। সাথে থাকে দু’বেলা খাবার ও থাকার জায়গার ব্যবস্থা।

বাজারে শ্রম বিক্রি হতে আসা এ সব শ্রমজীবী মানুষগুলো যে দিন নিজের শ্রম বিক্রি করতে পারেন না, সেদিন তাদের রাত কাটে বাজারের কাছাকাছি কোন মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা স্কুল ঘরের বারান্দায়। কখনো আধা পেটে বা কখনো উপোষ করে রাত কেটে যায় তাদের। সকাল হতেই আবার শ্রম বিক্রির আশায় চলে ছোটাছুটি।

কুমিল্লা উল্লেখিত হাট বাজার গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, এ সকল হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা অভাবী মানুষদের বেশির ভাগেরই বাড়ী রংপুর, গাইবান্ধা, নীল ফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, নেত্রকোণা ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের উত্তরÑপশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। পদুয়ার বাজারে কথা হয় রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার ময়রাবাড়ি গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে রহিদুল (২২) এবং একই উপজেলার চিড়িয়াখাল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে শমসের আলী (২৫) এর সাথে। নিজদের আর্থিক অবস্থা ভাল না হবার কারণে তারা কাজের আশায় ছুটে এসেছে এ এলাকায়। তাদের অনেকেরই জমি-জমা যা ছিল তা নদীর ভাঙ্গনে চলে গেছে। বিজয়পুর বাজারে কথা হয় ময়মনসিংহ জেলার ধোবার উপজেলার কাউসার কান্দি গ্রামের শেখ কাশেম আলীর ছেলে শেখ রজ্জব আলী (৩৫) ও সুরুজ আলীর ছেলে রফিক (৩০) এর সাথে। এ এলাকায় তারা পাঁচদিন আগে এসেছে। গত ক‘দিন লালমাই এলাকার এক গৃহস্থের ক্ষেতের ধান কেটেছে। তাদের নিয়োগ দাতা ঐ গৃহস্থ দিনে ও রাতে ৩ বেলা খেতে দিয়েছে। রাতে শোবার জন্য কাঁথা বালিশ দিয়েছে বলে তারা জানায়। তারা আরো জানায়, নিয়োগদাতা গৃহস্থ ভাল লোক হলে থাকা খাবারের অসুবিধে হয় না। এমনটি না হলেই যত অসুবিধে। নিয়োগ দাতাতের অনেকেই কাজের মানুষকে মানুষই মনে করেন না।

চৌয়ারা বাজারে কথা হয় নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার হরিণ ধরা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩০) এর সাথে। কাজের জন্য এ এলাকায় তার আসার কারণ জানতে চাইরে সে জানায়, নিজ এলাকায় তাদের কোন জায়গাজমি নেই। এলাকায় কোন কাজ না থাকালে ছুটে আসেন কুমিল্লায়। কাজ পেয়ে গেলে বেশ ক‘দিন থাকবেন এখানে। কাজ শেষে সোজা বাড়ি ফিরে যাবেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের খোঁজে ছুটে আসা অভাবী মানুষগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় শ্রম বিক্রি করে তারা যা আয় করবে তা বাড়ি নিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য কাজে লাগান। কৃষির ভর মৌসুমে তাদের এলাকায় শ্রমিকের মজুরী খুব কম। তবু ও মৌসুমে তারা তাদের এলাকায় কাজ করেন। এলাকায় করার মত কোন কাজ না থাকলেই তারা বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধ্যানে। আসেন কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা ধানের চারা রোপন ও অন্যান্য কাজ করে কিছু রোজগার করে বাড়ি ফিরে যান। এভাবেই কাজের মৌসুমে এদের অনেকেই ছুটে আসেন এ এলাকায় এ রোজগার মৌসুমে হলেও এটা তাদের পরিবারের জন্য কিছুটা হলে ও আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দেয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads