• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
শ্যামনগরে স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

মৃত সোনাভানু (৪০)

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

শ্যামনগরে স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

পরিবারের দাবি হত্যাকাণ্ড

  • প্রকাশিত ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জেলেখালী গাজীপাড়া গ্রামে আব্দুল মান্নান (৪৮) ও সোনাভানু (৪০) বেগম নামের দিনমজুর এক দম্পত্তির রহস্যজনক মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। 

গতকাল শনিবার( ৭ ডিসেম্বর) রাত বারটার পরে কোন এক সময় এ দম্পত্তির মুত্য হয় বলে তাদের পরিবার এবং স্থানীয় সুত্রগুলোর দাবি। স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছে, নাকি দুবৃর্ত্তদের হামলার শিকার হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত ধারনা পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা দেখে গাজী বাড়ির ঈদগাহ মাঠের মিম্বরের পাশের কেটি ছোট রেইনট্রি গাছের ডালের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে মৃত অবস্থায় ঝুলে রয়েছে আব্দুল মান্নান। আর মাত্র তিন চার গজ দুরত্বে মাটিতে রক্তাত্ত্ব অবস্থায় শুয়ে রয়েছে তার স্ত্রী সোনা ভানু। সোনাভানুর মাথা এবং পিঠ ও হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্যা ধারালো অস্ত্রেও আঘাতের চিহ্নও লক্ষ্য করা যায়। তবে তার শরীরে যে পরিমান অস্ত্রের আঘাত দেখা গেছে ঘটনাস্থলে ঐ পরিমান রক্ত লক্ষ্য করা যায়নি। যা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

জানা গেছে নিহত আব্দুল মান্নান একই গ্রামের মৃত সোহবার গাজীল ছেলে এবং তার স্ত্রী সোনাভানু উপজেলার কালিঞ্জি গ্রামের সিরাজ গাজীর মেয়ে।

তাদের সংসারে আশরাফুল ইসলাম এবং সাইফুল ইসলাম নামের যথাক্রমে সাত ও পাঁচ বছর বয়সী দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। তারা দু’জনে চিংড়িখালী মাদ্রাসায় হাফেজী বিভাগে লেখাপড়া করে। উল্লেখ্য আব্দুল মান্নানের ইতিপুর্বে একটি বিবাহ ছিল এবং সন্তানদের নিয়ে তার প্রথম স্ত্রী বেনাপোলে বসাবস করেন।

এদিকে ঈদগাহ মাঠে মৃতদেহ পড়ে থাকার বিষয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রোববার সকালে শ্যামনগর থানা পুলিশ মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাা তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা মর্গে প্রেরণ করে। এছাড়া রহস্যজনক এমন মৃত্যুর খবর জানার পরপরই সাতক্ষীরা জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার জামিলুর রহমান ও শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আলহাজ¦ নাজমুল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ডানহতের মা কৈতুরি বিবি ও বেয়াই আব্দুস সাত্তার ও দুলাভাই আল মামুনসহ পরিবারের অনেকে জানান, আব্দুল মান্নান তার দ্বিতীয় স্ত্রী সোনা ভাণুকে নিয়ে কালিঞ্চি গামে বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি তার পৈত্রিক বাড়ি জেলেখালী গাজী বাড়ীতে আসা যাওয়া করতেন। তার পৈত্রিক বাড়িতে একটি জমি নিয়ে স্তানীয় আমজাদসহ আরও দুই একজনের সাথে তার মনোমালিন্য চলছিল বলে বলেও তার পরিবারের অনেকের দাবি।

নিহতের মা কৈতুরি বিবি জানান গত শুক্রবার তার ছেলে মান্নান স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে অঅসে। এসময় সে বাড়ির পাশ^বর্তী একটি জমি নিয়ে প্রতিবেশী আমজাদ ও সোহেল নামের এক ব্যক্তির সাথে বিবাদের বিষয়ে তার মাকে অবহিত করে।

কৈতুরি বিবি আরও দাবি করেন তার ছেলের কোন শত্রু ছিল না। তাই কেউ স্ত্রীসহ তাকে হত্যা করতে পারে বলেও তার মনে হয় না।

আব্দুল মান্নানের ছোট মেয়ে সুমি পারভীন জানান, তার পিতার মাতার মধ্যে কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না। কখনও তাদের মধ্যে কোন বড় ধরনের ঝগড়ার খবরও কেউ বলতে পারবে না। তিনি আরও জানান দুই ছেলে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আসার কারনে তারা রাতে পিঠা তৈরী কওে এবং তার পিতা বাজার থেকে আখ কিনে নিয়ে আসে। এমন অবস্থায় তার পিতা নিজ স্ত্রীকে এভাবে মেরে নিজে আত্মহত্যা করতে পারে না।

এদিকে স্থানীয় একাধিক সুত্র জানিয়েছে মৃতদেহ এর পাশে যে কুড়াল পাওযা গেছে তা আব্দুল মান্নান বা তার পরিবারের কারও না বলে পরিবারের সকল সদস্য একমত হয়েছে। তাদের ধারনা পিতাকে হত্যার পর তার মা স্বামীর খোঁজে বাইরে যেয়ে হত্যা কান্ডের দৃশ্য অবলোকন করায় তাকেও নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে।

এদিকে নিহতের বোন জামাতা ও বেয়াই আব্দুস সাত্তার জায়নায় ঘটনার রাত এগারটার দিকে আব্দুল মান্নান মুটোফোনে তাকে পারিবারিক একটি সমস্যার বিষয়ে পরামর্শের জন্য তার খাল বোন এবং বেয়াইকে পরবর্তী দিনে কিছু কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আলহাজ¦ নাজমুল হুদা বলেন, আপাত দৃষ্টিতে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার বিষয়ে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কোন সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া সমীচিন হবে না। অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads