• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কক্সবাজারে বন্ধ হচ্ছে বেশির ভাগ খেলার মাঠ

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

কক্সবাজারে বন্ধ হচ্ছে বেশির ভাগ খেলার মাঠ

খেলার মাঠ ঠিক রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনের দাবি

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০২০

কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সরকারের আন্তরিকতায় এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হলে এই পর্যটন নগরী কক্সবাজার শুধু দেশে নয় আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ন শহর হিসাবে খ্যাতি পাবে। আমরা সবাই হবো এই গর্বিত কক্সবাজারের অংশিদার।

তবে বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাপক নগরায়ন এবং উন্নয়নে খেলার মাঠ গুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শুধু জেলা শহর নয় প্রত্যেক উপজেলাতেও খেলার মাঠ গুলো আগের মত ভাল অবস্থায় নেই। বন্ধ হয়ে গেছে বেশির ভাগ খেলার মাঠ। তাই খেলার মাঠ ঠিক রেখেই সমস্ত উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। একই সাথে রোহিঙ্গা সংকটের ফলে স্থানীয়দের জন্য বরাদ্ধের ৫% ক্রীড়াখাতে খরচ দাবি জানিয়েছে ক্রীড়ামুদিরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে কক্সবাজার শহরে বেশির ভাগ খেলার মাঠ বন্ধ হয়ে গেছে যে সব মাঠে আগে নিয়মিত বিভিন্ন লীগ আয়োজন হতো সে সব মাঠ এখন কাটাতার বা ইটের দেয়ার দিয়ে ঘেরা। যেমন ঐতিহ্যবাহী জেলা পার্ক মাঠ এখন বলতে গেলে বন্ধ ,বাহারছড়া গোলচত্তর মাঠে নিয়মিত বিভিন্ন লীগ সহ ট‍ুর্নামেন্ট আয়োজন থাকতো সারা বছর। কিন্তু বর্তমানে সেই মাঠ উন্নয়নের নামে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

কেন্দ্রীয় ঈদগাও মাঠ ছিল অঘোষিত ইনডোর স্টেডিয়াম,এখানে বছরে ২ বার ঈদের নামাজ পড়া হলেও এই মাঠে সারা বছর জুড়ের স্থানীয় কিশোর যুবকরা ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু সহ মাতিয়ে রাখতো সব ধরনের খেলাতে। কিন্তু বর্তমানে এই মাঠে অপরিকল্পিত উন্নয়নের অংশ হিসাবে অর্ধেক মাঠে আরসিসি ঢালাই দিয়ে পুরু মাঠকে খেলার অকোজো করা হয়েছে। ফলে এই মাঠে আর খেলা হয়না। এখন ইট, বালি বিক্রেতা এবং গাড়ী পার্কিং এর দখলে থাকে এই মাঠ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পিটি স্কুল মাঠ ছিল বৃহত্তর রুমালিয়ারছড়ার প্রাণ এই বিশাল মাঠে সারা বছর জুড়ে থাকতো খেলাধুলা। স্থানীয় স্কুল কলেজ গুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যাক্তির জানাযা সহ অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার হতো এই মাঠ। তবে সম্প্রতি এই মাঠে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ সেন্টার করায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি মাঠ দখল হয়ে গেছে। এবং বাকি মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার শিশু কিশোর। এছাড়া কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠটিতে এখন ২ টি বিল্ডিং করার কারনে সেটিও আর খেলার উপযোগি নেই।

জেলা দলের সাবেক অধিনায়ক কৃতি ফুটলার মাসুদ আলম বলেন কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী খুরুশকুল ইউনিয়নের ডেইলপাড়ায় একটি উপজেলা মাঠ ঘোষণা করা হলেও সেটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া এই ইউনিয়নের কিস্তির দোকান এলাকায় একটি বিশাল মাঠ ছিল সেখানে সারা বছর খেলাধুলার থাকতো সেই মাঠ এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে রামু, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া উপজেলাতে উপযুক্ত কোন খেলার মাঠ নেই বলে জানান স্থানীয় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। ব্যাতিক্রম শুধু উখিয়া উপজেলা সম্প্রতী এই উপজেলাতে একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থার কর্তৃক ২টি খেলার মাঠকে উপযুক্ত করে গড়ে তোল‍া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, আকাশ সংস্কৃতি এবং মাদকের ভয়াবহতার এই যুগে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ মানসিক বিকাশের একমাত্র মাধ্যম খেলাধুলা। আর খেলাধুলার একমাত্র উপকরণ মাঠ, সেই মাঠই যদি না থাকে তাহলে কিভাবে আমরা একটি সুস্থ জাতি আশা করতে পারি? তাছাড়া এখন যেটা করার সুযোগ আছে হয়তো আগামী কিছু দিন পরে সেটা করার সুযোগ থাকবেনা। তাই এখন থেকে সব জায়গাতে খেলার মাঠ ঠিক রেখেই উন্নয়ন করার দাবি এবং খেলার মাঠে কোন ভবন বা স্থাপনা না করার আহবান জানান তিনি।

জেলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলে রয়েছে কক্সবাজারের ৪ জন গর্বিত সন্তান তারা হলেন চকরিয়া উপজেলার ইব্রাহিম, জিকু, সুশান্ত এবং মহেশখালী উপজেলার সবুজ। এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট দলের অধিনায়ক সৌরভ প্রতিনিয়ত কক্সবাজারবাসীর সম্মান বাড়াচ্ছে সেই সাথে সম্প্রতি বিশ্বকাপ জয়ী অনূর্ধ ১৯ জাতীয় ক্রিকেট দলে কক্সবাজারের সন্তান হাসান মুরাদ আমাদের নতুন করে সম্মান বাড়িয়েছে। যদি খেলার মাঠগুলোকে ঠিকমত সংরক্ষণ করা যায় তাহলে কক্সবাজারে জাতীয় মানের খেলোয়াড় আরো তৈরি হবে।

কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, একটি পরিকল্পিত শহরের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমান খোলা মাঠ রাখা। উন্নত অনেক দেশে আমি দেখেছি খোলা মাঠ রেখেই বাকি অংশে উন্নয়ন করা হচ্ছে। আর ইদানিং প্রায় স্কুলের ভবন গুলো হচ্ছে দ্বিতল বিশিষ্ট আবার যদি একই স্কুলে ভবন করতে চায় তাহলে অন্যস্থানে করতে হচ্ছে এভাবে স্কুল গুলোতে খালি জায়গা থাকছেনা। এটা আসলে পরিকল্পনার অভাব প্লান করার সময় যদি এগুলো খেয়াল রাখা হয় তাহলে অনেক জায়গা এবং অর্থ অপচায় রোধ করা হয়। আর বর্তমানে কক্সবাজারে খোলা মাঠের তীব্র সংকট লক্ষ করা যাচ্ছে এটা মোটেও একটি পর্যটন নগরীর উপকরণ হতে পারেনা। আমার মতে রোহিঙ্গা সংকটের ফলে স্থানীয়দের জন্য বরাদ্ধের ২৫% এর মধ্যে ৫% টাকা খরচ করতে হবে ক্রীড়ার সামগ্রিক উন্নয়নে।

এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, খেলার মাঠ সংরক্ষণ এটা বর্তমান সময়ের সব চেয়ে সঠিক দাবি। এখন থেকে প্রতিটি সংস্থার কাছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে খেলার মাঠ রেখেই উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর জন্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads