• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ও জৌলুস ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ও জৌলুস ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

  • কুদরত উল্যাহ, মনোহরগঞ্জ-লাকসাম প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ ২০২০

এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোটো হয়ে আসছে নদীটি। এমন পরিস্থিতি উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। নতুন উদ্যোগে নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আসবে ডাকাতিয়ার। এ সংবাদে নদী এলাকার মানুষ মহাখুশি। 

সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৭ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৬৭ মিটার (২২০ ফুট)। এটি মেঘনার একটি উপনদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-বৃহত্তর লাকসাম, চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটির ধরন প্রকৃতি সর্পিলাকার।

নদীটির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। এ নদী দিয়ে একসময় মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করত এবং নদীতে ডাকাতি করত। ডাকাতের উৎপাতের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আবার কারো কারো মতে, ডাকাতিয়া নদীর করাল গ্রাসে দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। জীবন বাঁচাতে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিলসমাধি রচিত হয়েছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলে এর নামকরণ হয়েছে ডাকাতিয়া নদী।

বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত থাকলেও এ ডাকাতিয়া নদী একসময় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। নদীতে চলতো স্টিমার ও বড় বড় নৌকা । পণ্য পরিবহন ছিল সহজলভ্য। কৃষকরা পেতো সেচ সুবিধা। বর্ষা মৌসুমে ডাকাতিয়ার গর্জন শুনতে দুই ধারে চোখে পড়তো পর্যটকদের ভীড়। এখন ডাকাতিয়ার পাড় নেই। নেই পর্যটকদের আনোগোনা। শুনা যায়না পানির গর্জন। দুই পাড় দখলে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। ডাকাতিয়া নদীতে একসময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় খুব বেশি মাছ পাওয়া যায়না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড় অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। নদী তীরের আশে-পাশের বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে নানা রোগ ব্যাধি ছড়াচ্ছে। সর্বোপরি কালের বিবর্তনে মরতে বসেছে ডাকাতিয়া। এতে নদীটির সুফল বঞ্চিত নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী সহ ভ্রমন পিপাসুরা।  

গত বছরের ২ মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডাকাতিয়া নদীর দুই তীর পরিদর্শনে এসে খনন ও উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। 

তবে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি’র আন্তরিকতা ও তৎপরতায় ডাকাতিয়ার নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আসার বিষয়ে আশার আলোর দেখছেন নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। মন্ত্রী নদীটির নাব্যতা ফিরে আনার পাশাপাশি নদীর দুই তীরকে দৃষ্টিনন্দিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম অংশে পরিদর্শনে আসেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। এসময় অন্যান্যাদের মধ্যে ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, পূর্বের ন্যায় ডাকাতিয়ার নদীর নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আনা হবে। নির্বিঘ্ন নৌ-চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসায়ী, সেচ সুবিধার মাধ্যমে কৃষকরা যাতে নদীটির সুফল ভোগ করতে পারে এজন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads