• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা আতংকে অরক্ষিত সীমান্ত এখন চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

করোনা আতংকে অরক্ষিত সীমান্ত এখন চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য

  • এসকে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২০

দেশজুড়ে করোনা আতঙ্কে লালমনিরহাটের কাটাতারের বেড়াবিহীন জেলার অরক্ষিত সীমান্তপথ হয়ে উঠেছে মাদক ও চোরাচালানকারীদের অভয়ারণ্য। সীমান্ত ঘেষা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুদেশের মানুষের চলছে অবাধ যাতায়াত। এতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে সীমান্ত অপরাধ প্রবণতা।

সীমান্তবর্তী এ জেলার ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্তপথের ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাটাতারের বেড়া নেই। সীমান্ত অপরাধ ঠেকাতে বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়ন তথা ১৫, ৫১ ও ৬১ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। করোনা আতঙ্ক ও প্রশাসনের নজরদারী কম থাকায় এই সময় কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্ত পথে চোরাকারবারিদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। করোনা আতঙ্কের সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা যায়, করোনা আতঙ্কে লোকজন ঘর থেকে বের না হওয়া ও প্রশাসনের নজরদারী কম থাকায় সীমান্তের অন্তত ৩০টিরও বেশি পয়েন্ট দিয়ে রাতের বেলায় শতাধিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। সীমান্ত পেড়িয়ে দেশে আসছে মাদকের বড় বড় চালান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতার মদদে বিজিবির কতিপয় অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় চোরাকারবারিরা বেশ সংগঠিত হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের খামারভাতী গ্রামের ফজলু মেম্বারের ছেলে ফয়জার আলী, মৃত ছকমালের ছেলে মশিয়ার রহমান, আজিজার রহমানের ছেলে ইব্রাহিম, বিএসএফ এর গুলিতে নিহত জয়নালের পুত্র আনারুল, চন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল মজিদ কাকড়ার ছেলে লায়লা, মৃত মহসিন আলীর ছেলে মফিজুল ইসলাম, মৃত তছলিম উদ্দিনের ছেলে আলো মেম্বার, মৃত অভয়ের ছেলে বাদশা মিয়ার নেতৃত্বে প্রতিরাতে মাদক পারাপার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী সীমান্তপথ দিয়ে। আর চোরাকারবারিরা এতোটাই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

তবে ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মকবুল হোসেন বলেন, সীমান্তে বিজিবি টহল দেয়। গোয়ান্দা পুলিশের কোন সদস্য ওই এলাকায় যান না।

তবে অভিযোগ পেলে তারা অভিযান পরিচালনা করবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুলালী সীমান্তের এক শিক্ষিত যুবক বলেন, উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দীর্ঘ সময় চাকরির বাজার ঘুরে চাকুরী না পেয়ে এখন তিনি চোরাকারবারির সাথে যুক্ত হয়েছেন। তবে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে আলোর পথে ফিরবেন।

কয়েকটি সীমান্ত ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় কৃষি কাজের নাম করে ভারতীয়রা যেমন বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তেমন বাংলাদেশীরাও ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছেন। এসব লোকের অনেকের রয়েছে দুদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র। প্রকাশ্যে গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য অবাধে পারাপার করছে। আবার কেউ কেউ গরুর ঘাস সংগ্রহের নামে ঘাসের বস্তার ভিতরে নেশা জাতীয় দ্রব্য পারাপার করছে। আর রাতে তো কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে বাঁশের চরকি দিয়ে গরু পারাপারের ঘটনা অনেক পুরোনো। তবে কোথাও আবার কাঁটাতারের নিচ দিয়ে সুরঙ্গ করা রয়েছে।

সীমান্ত অপরাধ নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে জান যায়, সীমান্ত অপরাধ কমাতে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির নজরদারী বাড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে বিজিবির রংপুর রিজিওনের সেক্টর কমন্ডার কর্ণেল আবু জাহিদ সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিজিবির কঠোর নজরদারী ও জোর তৎপরতা রয়েছে। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরী। এজন্য তিনি জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads