করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের সংস্পর্শ। একজন মানুষের কাছ থেকে অন্য মানুষের সংস্পর্শে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারের একার পক্ষে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়; এজন্য সরকারের নির্দেশ মেনে চলার পাশাপাশি সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ঐক্যবদ্ধ পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় একযোগে ১১.৫ বর্গ কিলোমিটারের গৌরনদী পৌরসভাসহ ১৪৭.৮৯ কিলোমিটার (৫৭.১০ বর্গমাইল) উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ হাট ও বাজারে দিনভর জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়েছে। উপজেলা প্রেসক্লাবের পেশাদার ২১ জন সাংবাদিক সামাজিক দ্রুত বজায় রেখে এ কর্মসূচিতে অশংগ্রহণ করেন। সকাল দশটায় উপজেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সামনে থেকে কার্যক্রমের শুভ সূচনা করা হয়। এসময় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ সভায় উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি খোকন আহম্মেদ হীরার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মণীষ চন্দ্র বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-সিনিয়র সদস্য জহুরুল ইসলাম জহির ও সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া।
উপজেলা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জামিল মাহমুদ ও সহসম্পাদক মোহাম্মদ আলী বাবু বলেন, সড়কপথে বরিশাল বিভাগে প্রবেশের প্রথম উপজেলা গৌরনদী। এ উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ও টরকী-ঢাকা নৌরুট। বর্তমানে এসব রুট দিয়ে দুরপাল্লার যানবাহন ও যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বল্প পরিসরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। এ উপজেলার উত্তরে ও পূর্বের একাংশে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা, পূর্বে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা, দক্ষিণে উজিরপুর এবং পশ্চিমে আগৈলঝাড়া উপজেলার অবস্থান।
তারা আরও জানান, পাশ্ববর্তী মাদারীপুর জেলায় করোনা ঝুঁকি থাকায় অনেক আগেই মাদারীপুর জেলাকে লক ডাউন ঘোষণা করেছেন প্রশাসন। এরপর মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সদ্য দেশে ফেরা অসংখ্য প্রবাসীসহ বাসিন্দারা গৌরনদীতে অবাধে যাতায়াত করতে থাকেন। এছাড়া সরকারী ছুটি ঘোষণার পর পরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গৌরনদী পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ এসেছেন। এছাড়া অসংখ্য প্রবাসীরাও দেশে ফিরে হোম কোয়েরেন্টিনে রয়েছেন।
উপজেলা প্রেসক্লাবের সহদপ্তর সম্পাদক প্রেমানন্দ ঘরামী বলেন, গৌরনদীর সাথে কালকিনি উপজেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম পালরদী নদীর টরকী বন্দরের ব্রিজসহ সকল খেয়াঘাট ও ১২টি অভ্যন্তরীন সড়ক বন্ধ করেছে প্রশাসন। তার পরেও কৌশলে কালকিনি উপজেলার লোকজনে সড়ক পথে ভূরঘাটা হয়ে গৌরনদীতে যাতায়াত করছেন। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রেসক্লাবের সহপ্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, প্রশাসনের কঠোর নির্দেশের পরেও বিভিন্ন অযুহাতে গৌরনদীতে বহিরাগত মানুষের সমাগম কমছেনা। তাই গৌরনদীর মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর ভূরঘাটা বাসটার্মিনাল, ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, নীলখোলা, টরকী বন্দর ও বাসষ্ট্যান্ড, কসবা, গৌরনদী বন্দর, উপজেলা পরিষদ ও বাসষ্ট্যান্ড, আশোকাঠী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কাছেমাবাদ, মাহিলাড়া, বাটাজোর বাসষ্ট্যান্ডসহ উপজেলার খাঞ্জাপুর, বার্থী, চাঁদশী, মাহিলাড়া, নলচিড়া, বাটাজোর ও সরিকল ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ হাট ও বাজারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়েছে। এছাড়া হাট ও বাজারে উপস্থিতিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করাসহ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোয়া এবং সরকারের নির্দেশ মেনে চলার জন্য সচেতন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি খোকন আহম্মেদ হীরা বলেন, আদমশুমারি অনুযায়ী গৌরনদী উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮৬ জন। সম্প্রতি সময়ে এ উপজেলায় অসংখ্য প্রবাসী দেশে ফিরে আসাসহ করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিবেশী কালকিনি উপজেলাবাসীর অবাধে গৌরনদীতে চলাফেরা করার বিষয়টি উপজেলা প্রেসক্লাবের কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তোলে। তারই ধারাবাহিকতায় সচেতনতাই করোনা থেকে মুক্তি মেলবে এমন শপথ নিয়ে করোনাভাইরাস দূর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি পুরো উপজেলাকে সুরক্ষায় রাখতে উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে একযোগে জীবাণুনাশক স্প্রে ও পাঁচ শতাধিক মাস্ক বিতরণ করা হয়। দিনভরের এ কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন, গৌরনদী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম মিজান, সাংবাদিক জিএম জসিম হাসান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য পার্থ হালদার, এইচএম মোশারফ হোসেন, মোল্লা ফারুক হাসান, আতাউর রহমান চঞ্চল, আরেফিন রিয়াদ, বিনয় কৃষ্ণ শিয়ালী ও মাসুদ সরদার।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইসরাত জাহান বলেন, পুরো উপজেলাকে সুরক্ষায় রাখতে একযোগে পৌরসভাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে জীবাণুনাশক স্প্রে করার জন্য উপজেলা প্রেসক্লাবের এমন মহতি উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। এরইমাধ্যমে তারা (উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্যরা) প্রমান করে দিয়েছেন, সত্যিকারভাবে তারা দেশকে কতো ভালবাসেন। সচেতন উপজেলাবাসীকে যার যার অবস্থান থেকে সরকারের নির্দেশ মেনে চলার পাশাপাশি এভাবেই মহতি উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, পুরো উপজেলাকে সুরক্ষায় রাখতে গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাবের একঝাঁক সদস্যদের এ মহতি উদ্যোগ দেখে জেলার সকল উপজেলার সাংবাদিক সংগঠন থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ ও গ্রামপর্যায়ের যুবকদের শিক্ষা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের একার পক্ষে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ মহামারি থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারের নির্দেশ মেনে চলার পাশাপাশি গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে প্রাণঘাতি করোনা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।