• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
লকডাউনেও আনসার কমান্ডারের নেতৃত্বে চলছে বাজার!

কালীগঞ্জ বাজারে আনসার কমান্ডারের পাহাড়ায় ক্রেতা সমাগম

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

মূল্য লাগামহীন, নেই তদারকি

লকডাউনেও আনসার কমান্ডারের নেতৃত্বে চলছে বাজার!

  • রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২০

দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা লকডাউন করা হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল এ ঘোষণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক। তবে লকডাউনের সেই ঘোষণাকে উপেক্ষে করে উপজেলা আনসার কমান্ডার মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চলছে কালীগঞ্জ পৌর বাজারের গৌরাঙ্গ ভান্ডার ও বেশ কিছু কাঁচা তরকারীর দোকান।

আর লকডাউনের সুযোগে ওই গৌরাঙ্গ ভান্ডার ইচ্ছেমত হাকাচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। তবে এ অবস্থায় বাজার তদারকিতে কেউই এগিয়ে আসছে না। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দোকান পাঠ বন্ধ থাকলেও শুধু একজন ব্যবসায়ী খোলা রাখায় অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন ওই গৌরাঙ্গ ভান্ডারের খুঁটির জোর কোথায়?

আজ শনিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, কালীগঞ্জ বাজারে শুধু গৌরাঙ্গ ভান্ডার বাদে সব দোকান-পাঠ বন্ধ। গৌরাঙ্গ ভান্ডারের সকল শাটার নামানো থাকলেও একটি শাটার খোলা এবং তার ভেতরে আনসার কমান্ডার মুজিবুর রহমানের পাহাড়ায় বেশ কিছু ক্রেতা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করছেন। তবে সাংবাদিকদের দেখে ওই আনসার কমান্ডার নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন।
তবে এ সময় তাকে জিজ্ঞেস করতেই বলেন, দোকান বন্ধ করতে এসেছি। আর গৌরাঙ্গ ভান্ডারের মালিককে জিজ্ঞেস করতেই বলে মানুষজন আসলে কি করবো?

জানা গেছে, কালীগঞ্জে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) গত ১২ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ জন। গত ১২ দিনে এ উপজেলা থেকে ৩৯৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই নমুনা সংগ্রহের প্রেক্ষিতে ৮৯ জন করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। আক্রান্তদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ৪ জন কর্মচারী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারী মিলিয়ে ৩০ জন এবং কালীগঞ্জ থানার ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। বাকীরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও কালীগঞ্জ পৌর এলাকার।

দেশে করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার পর প্রথম অবস্থানে নারায়গঞ্জ থাকলেও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গাজীপুর জেলা। তবে জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে কালীগঞ্জের অবস্থা খুব খারাপ। এর মধ্যে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আর এ কারণে এ উপজেলার লকডাউনের আওতায় কালীগঞ্জ পৌর এলাকাকে আনা হয়। গত ১৪ এপ্রিল প্রথমে পৌর এলাকাকে পরে ১৫ এপ্রিল পুরো উপজেলাকে লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের কয়েকজন জানান, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দেশের করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে লকডাউন ঘোষণা করেন। কিন্তু শুরু থেকেই উপজেলা আনসার কমান্ডার মুজিবুর রহমান কালীগঞ্জ বাজারের কয়েকটি মুদি ও কাঁচা মালের দোকান থেকে সুবিধা নিয়ে তাদেরকে দোকান খোলার সুযোগ করে দেয়। আর এই সুযোগে ওই দোকানীরা জিনিসপত্রের দামও ইচ্ছেমত নিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় আরো কয়েক বাসিন্দার সাথে এবং বাজারে কয়েকজন দোকানীর সাথে কথা বললে তারা প্রশাসনের উপর ক্ষোভের কথাই বলল।

তারা জানায়, প্রশাসন নির্দিষ্ট কয়েকটি দোকানকে সুবিধা দিচ্ছে। আমাদেরও তো পরিবার আছে।

নাম প্রকাশে কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, আমরা প্রতিদিন একসাথে ডিউটি করছি। আর ডিউটি শেষে প্রতিদিন আমাদের কমান্ডার ২/৩ ব্যাগ ভরে সদাই নিয়ে যায়। এত টাকা পায় কোথায়? প্রতিদিন বাজারের বিভিন্ন দোকানকে খোলার সুবিধা দিয়ে ৫০/১০০ টাকা করে নিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে যাদের বিষয়টি দেখার কথা তারা কেউই দেখছে না।

এ ব্যাপারে ওই আনসার কমান্ডার মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনা সত্য নয়। বাজারে দোকান-পাঠ খোলা রাখলে আমি আরো ভয় দেখিয়ে তা বন্ধ করে দিচ্ছি।

ইউএনও মো. শিবলী সাদিক জানান, বিষয়টি আমি শোনার সাথে সাথে ওই কমান্ডারকে বাজার এলাকার দায়িত্ব থেকে সড়িয়ে দেওয়া দিয়েছি। আর অতিরিক্ত মূল্য রাখার বিষয়টি দেখবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads