• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
নদীর চর দখলকে নিয়ে চকরিয়ায় তাণ্ডব, ২৬ বসত বাড়ি পুড়িয়ে দিল দুর্বত্তরা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

আগুনে পুড়ে বৃদ্ধা নিহত

নদীর চর দখলকে নিয়ে চকরিয়ায় তাণ্ডব, ২৬ বসত বাড়ি পুড়িয়ে দিল দুর্বত্তরা

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০২০

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক এলাকায় মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের (ভরাটচর) জায়গার দখল নিতে সশস্ত্র একদল গ্রামবাসী গিয়ে একটি পাড়ায় নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।  এ সময় অন্তত ২৬টি  পরিবারের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। লুট করে নেওয়া হয়েছে এসব পরিবারের নগদ টাকা,গরু,ছাগল, হাস-মূরগী, মূল্যবান মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৫২ বছর বয়সী এক নারী। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন ।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধার নাম মনোয়ারা বেগম (৫৫)। তিনি ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী।

ক্ষতিগ্রস্ত খিলছাদক গ্রামবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে তাদের গ্রামের বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। তবে কয়েকবছর ধরে নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা দিন দিন জেগে উঠে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু নদীর ওপার তথা পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপারে এসে বার বার জেগে ওঠা জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।

সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে সাহরি খাওয়ার পর পরই শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী এসে একযোগে এপারের খিলছাদক গ্রামের অন্তত ২৬টি বসতবাড়িতে একযোগে হামলা ও লুটপাট চালায়। ফাঁকা গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। পরে একযোগে সবকটি বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে সব বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় কোটি টাকার মালামাল লুট ছাড়াও বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করে তারা।

এদিকে এই নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কক্সবাজার ১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ুয়া, বরইতলী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও মক্কী ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে জানান, কৈয়ারবিলের খিলছাদক অংশে মাতামুহুরী নদী সিকিস্তির জায়গার দখল নিতে এই নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একদল গ্রামবাসী। যারা এই তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত রয়েছে তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। যারাই এই অমানবিক ঘটনায় জড়িত থাকুক তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, অমানবিক এই ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এ ছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে করে কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কক্সবাজার ১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম  ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরো দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে। যাতে তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়। তা ছাড়া সরকারিভাবেও তাদেরকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারাই এই নারকীয় তাণ্ডবে জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads