• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
চৌদ্দগ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনকারীদের হয়রানীর অভিযোগ

উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামের করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আবুল কাশেমের লাশ দাফন করছেন হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

চৌদ্দগ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনকারীদের হয়রানীর অভিযোগ

  • মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০২০

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামে। শুক্রবার হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা আবুল কাশেমের লাশ দাফন করতে গেলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া দাফনকারীদের নিজ গ্রামেও প্রভাবশালীদের কারণে বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

শনিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনা মহামারীর সময়ে করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয় স্বজন কাছে আসে না। লাশ দাফনের লোক না পেয়ে কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিদের হাসপাতালে রেখে যায়। এ ক্রান্তিলগ্নে লাশ দাফনের মত মহৎ কাজে জড়িত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামের ‘হাসমত আলী ফাউন্ডেশন’। এছাড়াও ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত মার্চ মাস থেকে গরীব ও অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী, লিফলেট, মাস্ক এবং গ্লাভস্ বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হাসমত আলী ফাউন্ডেশন পুরো এলাকায় সুনাম অর্জন করেছে। শুক্রবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামের আবুল কাশেমের লাশ দাফন করতে সেখানে যায় হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের ছয়জন সদস্য।

অভিযোগ উঠেছে, বসকরা গ্রামের লোকজন মসজিদ থেকে খাটিয়া নিতে দেয়নি। প্রভাবশালী মহল পুরো এলাকা পুরুষ শুন্য করে দেয়। এছাড়া লাশ দাফনে দু-একজন ছাড়া কেউ সহযোগিতা করেনি। অনেক দূরের একটি মসজিদ থেকে খাটিয়া নিতে হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে খবর দিলে পুলিশের সহযোগিতায় আবুল কাশেমের লাশ দাফন করা হয়। বসকরা গ্রামের ভোগান্তি শেষে শুরু হয় ধনুসাড়া গ্রামের ভোগান্তি। ওই গ্রামের কতিপয় রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি কাজী রহমত উল্লাহ ও ইউপি মেম্বার ইউনুছ মেম্বার স্থানীয় মসজিদ ও হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের টিম-৫ এর নামাজে জানাযার ইমাম মাওলানা মাসুদ বিনকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের ছুটি দিয়েছে। বর্তমানে তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এছাড়া হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের অপর সদস্য মোঃ রতন, মনসুর ভুঁইয়া, মোঃ সোহাগ, জুয়েল হোসেন জয় ও শাখাওয়াত হোসেনকেও বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে শাখাওয়াত হোসেনকে তাঁর নানার বাড়িতে(দীর্ঘদিন ধরে সে ওই বাড়িতে থাকে) ঢুকতে দেয়নি বাড়ির লোকজন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষিত ও সচেতন মহল।

হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খোকন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লিখেন ‘সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মজিবুল হক এমপির আহবানে সাড়া দিয়ে হাসমত আলী ফাউন্ডেশন করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আবুল কাশেমের লাশ দাফন প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ধনুসাড়া গ্রামের কয়েকজন দুষ্ট লোক যারা জনকল্যাণ পছন্দ করে না, তারা সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করছে এবং বলছে এটা প্রশাসন জানে না। হাসমত আলী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, চৌদ্দগ্রামের ইউএনও, সার্কেল এসপি ও থানার ওসি অবগত রয়েছেন। লাশ দাফন করোনা মহামারিতে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ, গ্রাম ও রাষ্ট্রের পক্ষে একটি মহৎ কাজ। তাই কোন দুষ্ট মহল মহৎ কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। মানব কল্যাণে হাসমত আলী ফাউন্ডেশন মানুষের পাশে থাকবে, ইনশাল্লাহ।

এ ব্যাপারে ধনুসাড়া ফকির বাড়ি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এলাকাবাসী ও ইমামের সাথে আলোচনা করেই ইমাম মাওলানা মাসুদকে ছুটি দেয়া হয়েছে’। তিনি কি করোনা ভাইরাস নিয়ে মসজিদে যাবেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী রহমত উল্লাহ বিষয়টি এড়িয়ে যান।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় মসজিদের ইমামকে ১৪ দিনের ছুটি ও অন্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। আমি নিজ উদ্যোগে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি’।

এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকেই লাশ দাফনকারীদেরকে বসকরা গ্রামে অসহযোগিতা এবং ধনুসাড়া গ্রামে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা এবং মসজিদের ইমামকে ছুটি দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। এ ঘটনায় অনেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক লেখালেখিও করেন। কয়েকজন লিখেন- ‘সভ্যতার অগ্রগতিতে পশ্চিমা বিশ্ব মানব সেবায় এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা মুসলিম বিশ্বের মানুষের বিবেক দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’। আমাদের আশ-পাশে জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু কমে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব। চিকিৎসকরা বারবারই বলছেন-‘মৃত ব্যক্তি থেকে করোনা ছড়ায় না। তারপরও সমাজের কুচক্রি মহল করোনার ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। সমাজের জন্য এটা ভালো কাজ নয়’।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads