• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

জামালপুরে বন্যা মোকাবেলায় নৌকা-সাঁকো মেরামত চলছে

  • জামালপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২০

জামালপুরে বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদীপাড় ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ। তারা ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট নৌকা বানানো, ভাসমান চুলা তৈরি করে রাখছেন। পাশাপাশি গেল বছরের বন্যায় ভেঙে যাওয়া স্থানে ব্যক্তি উদ্যােগে বাঁশের সাঁকোও তৈরি করা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। বন্যা পরবর্তী সময়ে আটকা ডুবিয়ে রাখা নৌকা নতুন করে মেরামত করছেন। বন্যা মোকাবেলায় প্রধান বাহন হলো নৌকা। জৈষ্ঠে পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নৌকা, ভাঙা সড়ক মেরামত করা শুরু হয়েছে।

সরিষাবাড়ি সুমন মিয়া নৌকায় আলকাতরা দিচ্ছেন। সুমন মিয়া জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে আষাঢ় মাসে বর্ষা শুরু হবে। তাই আগে থেকেই নৌকা প্রস্তুত করছি।

চরপোগলদিঘার ফজলুল হক নতুন করে নৌকা মেরামত করছেন। দুজন শ্রমিক কাজ করছেন নৌকা তৈরি করতে। আরো সপ্তাহখানে সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

শ্রমিক সোলায়মান জানান, ছোট ডিঙি নৌকা তৈরি করতে ৭/৮ সময় লেগে যায়। এখন কাজের চাপ বেশি। সবাই তাড়া দিচ্ছে মেরামতের জন্য।

জামালপুরের সাতপাকিয়ার নুরুল হক পারাপাড়ের জন্য ৯ হাজার টাকার বিনিময়ে কেন্দুয়াকালি বাড়ি থেকে ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, বর্ষার ছয় মাস এ নৌকা দিয়েই শহরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এ নৌকা ক্রয় করেছেন।

মাদারগঞ্জে চরশুভগাছার আব্দুল্লাহ জানান, গত বছরের মতো এবারও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন অনেত কৃষক। বৃষ্টির কারণে এসব কৃষক  গো-খাদ্যের জন্য খড় শুকাতে না পারায় সংরক্ষণ করতে পারছেন না। ফলে আগামী দিনে  গো-খাদ্যের সঙ্কট নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এদিকে এতোকিছুর পরও বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন দুর্যোগপ্রবণ নিম্নাঞ্চল ও নদী পাড়ের মানুষ। নদীপাড়ের মানুষের নৌকা হলো প্রধান বাহন। বর্ষা নৌকা থাকলে গোখাদ্য সংগ্রহ করা যায় বিভিন্ন স্থান থেকে।

বকশীগঞ্জ উপজেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী বেষ্টিত বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে এবার উল্টো চিত্র। এবার এসব এলাকার মানুষ তাদের চিন্তা ধারা বদলে ফেলেছেন। বন্যা  মোকাবেলায় ব্যক্তিগত ভাবেই তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

মেরুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে নিজেদের অর্থায়নে বন্যা  মোকাবেলায় ভিটা উচুঁকরণ করা হয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার গত ১০ মাসে তাদের বাড়ির ভিটা উঁচু করেছেন। নিজ উদ্যোগ এবং বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও’র সৌহার্দ্য-৩ কর্মসূচির উদ্যোগে ২শ ৫২টি হতদরিদ্র পরিবারকে ভিটা উঁচু করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং মানুষের অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প দুর্যোগ  মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে  মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস  থেকে এই এলাকায় দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন উন্নয়ন সংঘের রি-কল ২০২১ প্রকল্প।

অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগেও বন্যার সময় পর্যবেক্ষণ, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও ত্রাণ কার্য সম্পন্ন করার জন্য নৌকা তৈরি করছেন। বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু একটি বড় নৌকা তৈরি করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাসান  মাহবুব খান জানান, গত বছরের বন্যার সময় একটি নৌকা প্রস্তত করা আছে। সেটি এবারো ব্যবহার করা হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নদী ভাঙন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য একটি তালিকা তৈরি জন্য চেয়ারম্যানদের শিগগিরই চিঠি দেয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর সহযোগিতায় একটি প্রতিবন্ধি বান্ধব নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। বন্যার সময় যেন সহজেই প্রতিবন্ধীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে তাদের সড়ানো যায়। বন্যার প্রকোপ শুরু হলেই সেটি হস্তান্তর করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর।

অপরদিকে বন্যা মোকাবেলায় সানন্দবাড়ী উত্তর পাটাধোয়া পাড়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে সেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়ার ২ নং ব্লকের উত্তর পাটাধোয়া পাড়ার মিজানুর রহমান সরকারের নেতৃত্বে আব্দুস সাত্তার সরকারের বাড়ীর সামনে গ্রামবাসীর সহযোগীতায় ৯০ ফুট বাঁশের সাঁকো নির্মিত করা হচ্ছে দুদিন ধরে।

গত বছর কালভার্টটি ভেঙ্গে যাওয়ায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামবাসীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গিয়েয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। নিরুপায় হয়েই তারা নিজেরাই কাজটি সম্পাদন করে। এ বিষয়ে মিজানুর রহমান সরকার জানান, তাকে কেউ আর্থিক সহযোগীতা করেনি।তবে সানন্দবাড়ী হাটবাজার ইজারাদার রেজাউল করিম লাভলু বিষয়টি জানতে পেরে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।

বকশীগঞ্জ উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত একটি সেতুর সংযোগ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কিন্তু ৯ মাস পর সেই সেতুর দু’পাশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সংযোগ তৈরি করায় সেতুটি আবার সচল হয়েছে।

সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু নিজ অর্থায়নে সাঁকোটি নির্মাণ করে দেয়ায় মানুষের চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়েছে।

উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের উত্তর ধাতুয়া কান্দা গ্রাম থেকে আলীরপাড়া গ্রামের রাস্তার নূরুজ্জামানের বাড়ি সংলগ্ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

সেতুটি নির্মাণের পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ভয়াবহ বন্যায় সেতুটির পলেস্তারা খসে যায় এবং সেতুটি দেবে যায়। একই সঙ্গে সেতুর দুই পাশের মাটি সড়ে গিয়ে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ কারণে এই সেতুর উপর দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুটির দুই পাশে মাটি ভরাটের উদ্যোগ না নেওয়ায় র্দীঘ ৯ মাস সেতুটি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে।

সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু জানান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যার কারণে সেতুটির দুই পাশে মাটি সড়ে গিয়ে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এতে করে মানুষের চলাচল ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে নিজ উদ্যোগেই সেতুটির দুই পাশে সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads