• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দুর্গাপুরে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা

আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ২০ বছরের তরুণ নাঈম আহমেদ

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

দুর্গাপুরে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা

  • দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০২০

মানসিক হতাশাগ্রস্থ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন কেউ কেউ । আত্মহত্যার এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে । গত এক মাসে এই উপজেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এই আত্মহত্যায়। 

দিন যত যাচ্ছে এর প্রবণতা ততই বেড়ে চলছে । পরিবারের সাথে মতের বিরুদ্ধো, প্রেমে ব্যর্থতা, মানসিক হতাশা, ব্যবসায় মন্দা, জীবনের প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকেই আত্মহত্যার মত কঠিন পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই ‌। 

গলায় রশি কিংবা বিষপান করে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি । আত্মহত্যার এই পথে তরুণ থেকে শুরু করে রয়েছে বৃদ্ধরাও।

প্রতিদিনই একজন দুয়েক জন করে হাসপাতালগুলোতেও আসছে বিষপান করা রোগী। এদের বেশিরভাগই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলছে চিকিৎসকরা। পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে বিভিন্নভাবেই মোটিভেশন দিচ্ছেন রোগীদের। কিন্তু তারপরও কমছেনা আত্মহত্যার রোগীর সংখ্যা। গতকাল রোববারও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২০ বছরের তরুণ নাঈম আহমেদ । 

পৌর শহরের বাগিচা পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে দুপুরে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । স্থানীয়রা জানায় বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক হতাশায় ভুগছিলেন নাঈম । 

গত তিনদিন আগে গ্রামের বাড়িতে যান নাঈমের মা । এ অবস্থায় নাঈম নিজ বাড়িতে একা থাকতো এবং প্রতিবেশির এক বাসায় খাওয়া-দাওয়া করতো ।

রোববার বেলা ১২টার দিকে এলাকার এক ছোট ভাই নাঈম ভাই বলে ডাকতে থাকে । পরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দেয় । এসময় নাঈম বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আছে দেখে বিষয়টি নাঈম যে বাসায় খাওয়া-দাওয়া করতো সে বাসায় জানায়। পরে তারা এসে জানালা দিয়ে দেখতে পায় নাঈম বিছানার উপর ফ্যানের হুকের সাথে ঝুলছে। পরে পুলিশ এসে মহাদেব উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে । 

গত ১৬ জুলাই চন্ডিগড় বাজারে পাশেই বিষপান করে আত্মহত্যা করেন সুলেমা খাতুন (৫৫) নামে মধ্যবয়স্ক এক নারী । 

এর আগে গত ৫ই জুলাই ও ২৪ জুন পৌর শহরেরই নিজ বাড়িতেই গাছে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন পুর্নিমা মেহতা (৪৮) ও  প্লাবন সরকার (৩০) । 

গেল এক মাসে পরপর চারটি আত্মহত্যার ঘটনায় স্তব্ধ পুরো উপজেলা । নতুন করে আর কোনো আত্মহত্যার মতো জগনময় পথে কেউ পানা বারা এই কামনাই রাখছেন সবাই ।

উপজেলা সচেতন মহলের নাগরিকরা বলেন, আত্মহত্যা কখনোই সমাধানের পথ হতে পারে না । আত্মহত্যা মধ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করায় পরিবারের মাঝে সৃষ্টি হয় তীব্র হতাশা । পরিবারের একজন সদস্যকে হারানোর এই শোক সারা জীবনই বইতে হয় পরিবারের প্রতিটি মানুষকে । 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বিষপান করা কোনো না কোনো রোগী হাসপাতালে আসছেই । এখনো দুইজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে । বিশেষ করে ২০ থেকে ৩০ এই বয়সের রোগী সবচেয়ে বেশি । মানসিক হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন তারা । এ ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনেকটাই হুমকি ডেকে আনতে পারে । আমাদের তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি যাতে দ্বিতীয় বার এরকম কোন ভুল তারা না করে । আসলে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে মানসিক হতাশাগ্রস্তদের বুঝানো হলেই কিংবা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললেই আত্মহত্যার পথে ঝুঁকবে না তরুণ প্রজন্মরা ।

এদিকে দুর্গাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি জানায়, মানসিক হতাশাগ্রস্থ শেষ পথ কখনোই আত্মহত্যা হতে পারে না । বরং পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সৎসঙ্গই পারে এই মানসিক হতাশা কাটিয়ে নতুন একটি জীবনে ফিরিয়ে আনতে । এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরও আন্তরিক হয়ে হতাশাগ্রস্ত কে বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং তার সমস্যাগুলো সমাধানের সুযোগ দিতে হবে । জোর করে কোন জিনিস চাপিয়ে না দিয়ে তার ইচ্ছাটুকু পূরণের স্বাধীনতা পেলেই আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে । আবার অনেক সময় ব্যক্তির মৌলিক অধিকার অর্জন করতে গিয়েও সমাজের কঠোর আচরণ ও বারবার হেয় প্রতিপন্ন হয়ে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে মানুষ । এক্ষেত্রে কেউ যদি হেয়পতিপন্ন কিংবা তাদের মৌলিক অধিকার টুকু অর্জনে বাধাগ্রস্ত হয় আমাদের শরণাপন্ন হলে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে তার অধিকারটুকু অর্জনে সহায়তা করবো ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads