• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মুকসুদপুর পৌরসভার একটি অংশে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দী ২০০ পরিবার

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মুকসুদপুর পৌরসভার একটি অংশে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দী ২০০ পরিবার

  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০২০

হায়দার হোসেন, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জ জেলার ২য় শ্রেণীর মুকসুদপুর পৌরসভা। এই পৌরসভায় ৫ নং ওয়ার্ড গোপীনাথপুরের নতুন পাড়া। এই নতুন পাড়ায় বর্তমানে ২ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই সব পরিবারের মধ্যে কেউ আছেন চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, স্কুল ছাত্র এবং শিক্ষক। সমাজের সবশ্রেণীর লোকের বসবাস থাকলেও এই নতুন পাড়া এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট বৃষ্টি নামলে এক থেকে দুই মাস থাকে জলাবদ্ধতা। ব্যবস্থা থাকে না রাস্তায় বের হওয়ার। বর্জ্য ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। যাদের রিং স্লাব দিয়ে পয় নিস্কাষন তৈরি তাদের বাড়ির সব মলমূত্র বৃষ্টির পানিতে ভেসে রাস্তায় চলে আসে।

মুকসুদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ফরিদমিয়া কমপ্লেক্স থেকে ২০০ গজ দক্ষিণে গেলেই আজিজ শরীফের বাড়ীর পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তা দিয়ে মমিন মৃধার বাড়ী হয়ে, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, সামসুল হক ডাক্তারের বাড়ী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবদুল হান্নান শেখের বাড়ী, পুলিশ অফিসার আবু জাফর এর বাড়ী, অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মাহমুদ হোসেনের বাড়ী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন, আসাদুজ্জামান খোকন, বাবুল মজুমদারের বাড়ী, শিক্ষক আবদুল মান্নান লস্কর, বাবুল আহমেদ, সরকারি কর্মকর্তা কুদ্দুসুর রহমান বাহার, জাকির হোসেন, বাবুল মিয়ার বাড়ী। এই নতুন পাড়ায় প্রায় ১০০ নতুন বাড়ী। অনেকেই আছেন ভাড়াটিয়া। কোন কোন বাড়ীতে ৫/১০ জন ভাড়াটিয়া কোনো বাড়ীতে একটি। সব মিলিয়ে নতুন পাড়ায় ২শতাধিক পরিবার । এর মধ্যে ৫০ জনের বেশী প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে। এরা সবাই পানিবন্দি থাকে বছরের ৭/৮ মাস।

এই এলাকার বাসিন্দা এলজিইডি কর্মী জাকির হোসেন জানান এই এলাকায় আমি ১০/১২ বছর ধরে বাড়ী বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছি। আগে আবাদী জমি ছিল, ৩/৪ বছর আগে অতিবৃষ্টি হলেও রাস্তার পাশের আল দিয়ে পানি সামসু ডাক্তারের পুকুরে নামতো, সেই পানি আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে বেলায়েত হোসেনের জমির পাশ দিয়ে টেংরাখোলা টু আটাডাঙ্গা নালা দিয়ে গিয়ে পড়ে সব পানি আটাডাঙ্গা বাওড়ে গিয়ে পড়তো। ৩/৪ বছর হয় সামসু ডাক্তারের বাড়ীর পাশে সেই পুকুর থাকলেও বেলায়েত হোসেন তার জায়গায় ভবন গড়ে তুললেই বাধে বিপত্তি। পানি বের হওয়ার সব পথ বন্ধ। একটু বৃষ্টি নামলেই সেলিম সরদারের বাড়ীর পাশেই ফুটপাতের চা দোকানদার জব্বারের এবং তার সব ভাইদের বাড়ী থেকে শুরু করে হাফিজ মৃধার বাড়ী হয়ে সববাড়ীই জলাবদ্ধতায় আটকা পড়ে।

এই এলাকার প্রায় ৩০ বছরের বাসিন্দা, প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. সামসুল হক জানান ভাগ্যিস পৌর কর্তপক্ষ এই এলকায় পাকা রাস্তা করে দিয়েছে, সেই জন্য রিক্সা ভ্যান, মটর সাইকেলে সবাই যাতায়াত করে। তবে কোন ভ্যানওয়ালা একবার গেলে আর যেতে চায় না। কারণ ওই পানিতে এলাকাবাসী মলমুত্র ও সংসারের অপ্রয়োজনীয় নিকৃস্ট বর্জ ভাসতে দেখা যায়।

ওই এলাকার বাসিন্দা সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী হালিমা ইসলাম জানান, এটা নতুন পাড়া হলেও এখানে সব ভদ্র লোকের বসবাস। এখন একটু বৃষ্টি হলেই আটকা পড়ে যাই। কোন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কেউ বেড়াতে আসতে পারে না। স্কুলে কলেজে যেতে পারে না, সবার হাতে পায়ে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। কারো কারো সারা শরীরে খুজলি পাচড়া, চুলকানি মত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের এই পাড়ায় বেশ কিছু যুবক যুবতী রয়েছে তাদের বিয়ের প্রস্তাব আসলে তা শুধুমাত্র এই জলাবদ্ধতার জন্য ভেঙ্গে যায়। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে।

এব্যাপারে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন মিয়া জানান, ওই নতুন পাড়ার সমস্যার কথা পৗরসভাও অবগত। নতুন নতুন টাকা ওয়ালারা জমি কিনেই পৌরসভার নিয়ম না মেনে, এমনকি নুন্যতম অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি। কেউ কেউ অনুমোদন নিয়েও প্লানমত স্থাপনা নির্মাণ করেনি। এলাবাসী যদি জায়গা দেয় তাহলে পৌরসভার উদ্যোগে আমরা একটা ড্রেন নির্মাণ করে দিতে পারি। আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি, সবাই সমস্যার সমাধান চায়, কিন্তু কেউ এক ইঞ্চি জমি দিতে চায় না। পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় আমাদের বেশকিছু সম্মানিত নাগরিক বসবাস করেন। ওই এলাকার সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু তারা রাস্তার পাশে বাওন্ডারি ওয়াল দিয়ে রেখেছে, আমরা রাস্তা নির্মাণ করতে পারি না। ড্রেনও নির্মাণ করতে পারি না। এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দ্রুত সমাধান করতে পারি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads