সিরাজগঞ্জে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষের মারপিটে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদীকে অপহরণ করার পর ঘটনার দিনই বগুড়া থেকে উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রুবেল প্রমাণিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চালা শাহবাজপুর এলাকার আব্দুল কাদের প্রমাণিকের ছেলে এবং নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের বড় ভাই।
শাহজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দিন জানান, বগুড়ার শাহজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসুল্লীরা তাকে অসুস্থ্য অবস্থায় পাওয়ার পর সেখান থেকে রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। রুবেলের স্বজনদের সংবাদ দেয়া হয়েছে। তারা পৌছার পরই ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বগুড়ার শাহজাহানপুর রহিমাবাদ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসুল্লী ও স্থানীয় গোলাম রব্বানী বলেন, জোহর নামাজ শেষে আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে মসজিদের সামনে গেলে ওই যুবক দৌড়ে এসে বলে আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। মারপিট করে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি অসুস্থ্য মাথায় একটু পানি ঢালুন।
তিনি আরও বলেন, ছেলেটিকে খুবই আতঙ্কগ্রস্থ ছিল। আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে সেবা যত্ন করে মসজিদের মধ্যে রেখে দেই। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে অপহৃত রুবেলের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, রোববার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ছেলে রুবেল জামতৈল বাজারে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। দুপুরে তিনি সংবাদ পান তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সে বগুড়াতে আছে। সেখানে রওনা হয়েছেন, ছেলের কাছ থেকে জানার পর ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে জানান, কাদের প্রমাণিক।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পরই ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে ৩জন জেলহাজতে, আল আমিন নামে একজন জামিনে এবং প্রধান আসামী শিহাব আহমেদ জিহাদ পলাতক রয়েছে। ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এ অবস্থায় ৭জুন নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত: ৪০জন নেতাকর্মী আহত হন। টানা দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয়গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হন। এসব ঘটনায় পাল্লাপাল্টি আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এই সংঘর্ষের কারনে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে ৮ জুলাই থেকে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় তালা বন্ধ এবং আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৬ জুলাই মামলাটি সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের এস.আই বদরুদ্দোজা জিমেল বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন।