ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। গত ৬ মাসের উপরে কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেইসাথে বন্ধ রয়েছে তাদের বেতনও। আর্থিক অনটনের কারণে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওইসব শিক্ষকসহ অন্যান্যদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
এদিকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ভাড়া যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। এতে করে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ছুটি আরও দীর্ঘ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকবে কি না- তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬০টির মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সাড়ে ৩ শতাধিকের উপর স্থানীয় তরুণ-তরুণী শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তবে তারা ওই সব স্কুলগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। মূলত ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে শিক্ষকদের বেতন যত সামান্য হলে ও মূলত তাদের প্রাইভেট টিউশনি প্রধান ভরসা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বেতন যেমন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে তাদের প্রাইভেট টিউশনও। বর্তমানে শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় আর্থিক অনটনে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে তারা যে এক কঠিন অবস্থায় পারছেন মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।
পৌর শহরের তারাগন এলাকার ব্রিলিয়ান্ট একাডেমির পরিচালক মো. এরফানুল ইসলাম শরীফ বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হচ্ছে। ছাত্র বেতন-ফি আদায় বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক-অনটনে ভোগছেন।
শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেতন বন্ধ সেইসাথে প্রাইভেট ও বন্ধ রয়েছে। টাকার অভাবে গত ৩ মাস ধরে তিনি বিদ্যুৎ বিল পযর্ন্ত দিতে পারছেন না বলে জানায়। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন নির্বাহ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন অর্থ না থাকলেও শিক্ষক পরিচিতির কারণে শিক্ষকরা অন্যের নিকট সাহায্য চাইতে পারেন না। এখন অধিকাংশ শিক্ষকদের জীবন নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে।
শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, গত ৬ মাস যাবত বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বেতনও পাচ্ছি না। তাছাড়া সকাল বিকাল প্রাইভেট পড়িয়ে ভালো টাকা আয় করা যেতো কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। এখন যে পরিস্থিতিতে আছি ইচ্ছা করলে কোথাও গিয়ে কাজ করারও সুযোগ নেই। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে কী করব কোথাই যাব বুঝতে পারছেন না বলে জানায়। তিনি বলেন, এভাবে কি আর বেঁচে থাকা যায়? এজন্য তিনি সরকারের সহায়তার দাবি করছেন।
শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, অন্য কোনো পেশা না থাকায় কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা ও টিউশন করে ৫জনের সংসার চলতো। কোন প্রকার অভাব ছিল না। কিন্তু করোনায় সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। ধার দেনা করে এখন চলতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের মতো লোকদের মরন ছাড়া আর কোন পথ নেই।