• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মসজিদ-মন্দির

ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ-মন্দির

ছবি: লোটাস আহমেদ

সারা দেশ

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মসজিদ-মন্দির

  • ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর ২০২০

ধর্মের বিভক্তি! কিংবা সাম্প্রদায়িকতা! সব কিছুকে হার মানিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ ও মন্দির। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এই দুটি ধর্মীয় স্থাপনার অবস্থান। কালের বিবর্তন ও প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের অবহেলায় মন্দিরটি আজ ইতিহাস এবং নিজেদের প্রয়োজনে মসজিদের কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে স্থানীয় লোকজন।

মসজিদ ও মন্দিরের দেয়ালে অলংকিত নকশা ও কারুকার্য দেখে ধারণা করা হয় এটি মোঘল আমলে নির্মিত। কোন শিলালিপি না থাকায় মসজিদ ও মন্দিরের নির্মানকাল সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এই স্থানটি থেকে আনুমানিক ২০ কিলোমিটার দুরে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১৭১৭-১৮ খ্রিষ্টাব্দের দরিয়াপুর মসজিদের স্থাপত্যিক বৈশিষ্টের সাথে বেশ মিল রয়েছে এই মসজিদটির। সেটি থেকে ধারণা করা হয় এই মসজিদ ও মন্দির আঠারো শতকের প্রথম ভাগে নির্মিত হতে পারে।

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাট দূর্গ থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার পূর্বে ফুলহার মৌজায় এই মসজিদ এবং মন্দিরের অবস্থান। প্রাচীন এই মসজিদকে কেন্দ্র করে এটির নামকরণ করা হয়েছে ফুলহার প্রাচীন জামে মসজিদ। করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে নির্মিত এই মসজিদের উপরে তিনটি বিশাল আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের আভ্যন্তরিন ও বহিঃভাগের দেয়ালে মৌলিক টেরাকোটার খুবই সূক্ষ নকশা অলংকিত রয়েছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব নকশা বিলীন হয়ে যাবার পথে। মসজিদের ধার ঘেঁষে দক্ষিণ পাশে ১টি কবর রয়েছে। তবে এই কবরেকে শাহিত আছেন, তা সবারই অজানা। অপরদিকে মসজিদের ধার ঘেঁষে উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে ৬.১৭ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩.০৫ মিটার আয়তনের বারান্দাযুক্ত একটি দালান রয়েছে। দালানের পশ্চিম ভাগে নকশাকৃত মেহরাব আকৃতির একটি প্রবেশ পথ এবং দক্ষিণ পাশে চারটি একক স্তম্ভের উপর ৩টি খিলানপথ রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এই দালানটি দেওয়ানঘর নামে পরিচিত। ধারণ করা হয় দালানটি আলোচনা সভা বা দরবার বসত।

মসজিদ থেকে ১ মিটার পূর্বে পাশাপাশি সংযুক্ত চারটি ছোট ছোট মন্দিরের কক্ষ রয়েছে। যারমধ্যে একটি বন্যার পানিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাকি ৩টি মন্দিরের সম্মুখভাগে মেহরাব আকৃতির নকশাযুক্ত তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। মন্দিরের বাইরে দেয়াল জুড়ে অসংখ্য সূক্ষ নকশা রয়েছে। মন্দিরের কক্ষ তিনটির উপরে খাঁজকাটা পিরামিড আকৃতির ছাদ রয়েছে। এর একটি কক্ষের ভিতরে আয়তাকার একটি পাথর রয়েছে। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী অপর দুটি কক্ষেও দুটি পাথর রয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণ অভাবে তা চুরি হয়ে গিয়েছে। ধারণা করা হয়, এসব পাথরের উপরের মূর্তি রাখা হতো। অবশিষ্ট থাকা মন্দিরের তিনটি কক্ষে আর কোন ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রাচীন ইতিহাস বহনকারী এই মসজিদ ও মন্দিরের নির্মানকালের ব্যাপারে কারো কোন ধারণা নেই। এই দুটি ধর্মীয় স্থাপনার সম্পর্কে মৌখিক কিছু বক্তব্য বাপ-দাদার মুখ থেকে তারা শুনেছেন। প্রাচীনকালের এই স্থাপনা দুটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তারা একাধিকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর উদাসিনতায় সংস্কার তো দুরের কথা! সংরক্ষণ করাই সম্ভব হয়নি। মসজিদে মুসল্লি সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই প্রাচীন মসজিদকে কেন্দ্র করে নতুন দোতলা ভবন নির্মাণ করেছে তারা।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ঞ বর্মন বলেন,এই এলাকাতে এত পুরোনো একটি মসজিদ এবং মন্দির আছে! এই তথ্যটি আমার জানা ছিল না। আমি এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তি বা সংস্থা প্রাচীনকালে নির্মিত মসজিদ বা মন্দিরের সংষ্কার কিংবা সংরক্ষণের ব্যাপারে আমার দপ্তরে কোন আবেদন করেনি। আমি এই প্রথম এটি সম্পর্কে জানলাম। এই স্থাপনা দুইটি সংষ্কার ও সংরক্ষণে আমরা উদ্দ্যেগ গ্রহণ করব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads