• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
হাজীগঞ্জে বিলের পানি না নামায় রবিশস্যের আবাদ নিয়ে শঙ্কা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

হাজীগঞ্জে বিলের পানি না নামায় রবিশস্যের আবাদ নিয়ে শঙ্কা

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০২০

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে খালভরাট, খাল দখল, খালে কচুরিপানা, বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা এবং অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে নামছে না আবাদির জমির পানি। উপজেলার বিভিন্ন বিলের পানি এখনো না কমায় বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে বিলম্ব হচ্ছে বোরোসহ রবি শস্যের আবাদ। আর সময় মতো চাষ করতে না পারলে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহৃতের আশংকা করছেন, উপজেলা কৃষি দপ্তর। সেই সাথে রবিশস্যের আবাদ নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা।

গত কয়েকবছর ধরে এসব সমস্যা থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি, সরকারি সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগ বা দপ্তরকে। অথচ প্রতিবছরের মতো এবারো সরকারি প্রনোদনার ডিএমপি ও এমওপি মিলে মোট ১৬ হাজার ৬৫০ কেজি সার এবং বোরো ও হাইব্রীড ধানসহ বিভিন্ন ধরনের মোট ৮ হাজার ৮৪৮ কেজি বীজ কৃষকের কাছে পৌঁছে গেছে। কিন্তু অধিকাংশ বিলের পানি না কমায় কৃষক এই সার ও বীজ কাজে লাগাতে পারছেন না।

উপজেলার বিভিন্ন বিল ঘুরে দেখা গেছে, বিলের পানি নামার জন্য যেসব খাল রয়েছে। সেই সব খালে পলি মাটি জমে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে এবং খালে রয়েছে বিপুল পরিমানে কচুরিপানা। মৎস্য আহরণকারীরা খালগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ আহরণ করছেন। এ ছাড়াও কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর নির্মাণ এবং খাল-বিল দখল করে বাড়ি ও দোকানঘর স্থাপনের কারণে খাল ভরাট ও সরু হয়ে গেছে।

এসব কারণে বিলের পানি যথা সময়ে খাল এবং খাল হয়ে নদীতে নামতে পারছেন। তাছাড়া চলতি বছরে অতিবৃষ্টির কারনেও বিভিন্ন বিল ও নিচু জমিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতবার এই সময় কৃষকরা বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণের কাজ শুরু করেছিলেন। এবার পানি না সরায় এখনও বীজতলা তৈরি ও চারা রোপন করতে পারেননি তারা। তাই বোরো ধানসহ রবিশস্যের আবাদ নিয়ে শঙ্কিত তারা।

দেওদ্রোন ও খোদাইবিল মাঠের কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, বিলে বছরের এই একটি (শুষ্ক মৌসুম) সময় ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করা যায়। ধানসহ রবিশস্য রোপণের সময় চলছে, অথচ আমরা জমি তৈরি করতেই পারছি না। খালের দখলমুক্ত এবং খালের মাটি দ্রুত সরানো না গেলে এবার ধান চাষ করা যাবে না। আর এটা যদি হয়, তাহলে আমরা খাব কী?

এ সময় তারা (ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা) বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি কর্মকর্তা এবং সহকারী উপ-প্রকৌশলীর (ক্ষুদ্র সেচ) দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর প্রতিকার চেয়েছেন।

দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের জাকির হোসেন নামের একজন ইউপি সদস্য জানান, স্থানীয়দের হালট ও খাল দখল করে বাড়িঘর ও দোকানপাট করার কারনে আমাদের দেওদ্রোন মাঠের (বিল) পানি এখনো নামেনি। যার ফলে কৃষকেরা জমিতে বীজতল ও চারা রোপন করতে পারছে না। গত কয়েকবছর যাবৎ কৃষকরা এই সমস্যাই ভুগছেন বলে তিনি জানান।

কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানীয়া বোয়ালজুরি খাল হতে কচুরিপানা অপসারনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে একটি দরখাস্ত করেছেন। তিনি বলেন, খালে এতো বেশি কচুরিপানা নৌকা চলাচলতো দূরের কথা, ঠিকমতো পানিও নামছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুর রহমান জানান, যথা সময়ে বিল থেকে পানি নিস্কাশন না হওয়ার কারনে শষ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহৃত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, বিলে ও খালে পানি নামার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলেই কৃষক লাভবান হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) ও উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব মো. মামুন রশিদ জানান, খাল দখল, পলিজমে খাল ভরাট, খালে কচুরিপানা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ আহরণ এবং বিভিন্ন বাজার এলাকায় খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখাসহ বিভিন্ন কারণে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বিলের পানি নামতে দেরি হচ্ছে।

তিনি বলেন,পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের মাধ্যমে হাজীগঞ্জে ৩০ কিলোমিটার খাল খননের প্রস্তাব রয়েছে। এই ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলতি অর্থ-বছরে ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি বৈশাখী বড়ুয়া জানান, উপজেলার কোনো খালের কোথায় ভরাট বা দখল হয়েছে এবং পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা চিহিৃত করার জন্য উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) মো. মামুন রশিদকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে খাল ভরাট বা খালে প্রতিবন্ধকতা থাকলে তার সমাধান সরকারিভাবে করা হবে। আর যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে খাল দখল করে থাকেন, তা অপসারণ করার জন্য তাকে নির্দেশনা দেয়া হবে। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads