কখনও সাংবাদিক! কখন যুবলীগ নেতা! কখনও এমপির অ্যাম্বাসেডর! কখনও ক্রীড়াবিদ! আবার কখনও বালু ব্যবসায়ী! এই পঞ্চপদে নিজেকে জাহির করতেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবু। গত বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ পুলিশের দুটি মামলায় নিজ বাড়ি থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ এবং গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাবু উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের প্রতিনিধি হয়ে ‘আমার এমপি ডট কম’ নামক একটি সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছিল। গ্রেপ্তার ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবুর আপন ছোট ভাই ও পৌর যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ওয়াকার আহম্মেদ নান্নুকে বহুল আলোচিত ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। গত ২১ ডিসেম্বর আদিবাসির বাড়িতে হামলা, শ্লীলতাহানি সহ চাঁদাবাজির দুটি মামলা এবং মাদক সেবন করায় ভ্রাম্যমান আদালতে ১ বছরের সাজা হওয়ায় নান্নুকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আর এর পর থেকেই ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন এবং থানা পুলিশের নামে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি সহ বেশ কয়েকটি আইডি থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ অভিযোগ এনে বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও উসকানীমূলক বিভ্রান্তকর স্ট্যাটাস দিয়ে আসছিল বাবু।
এর পর পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বাবুকে তার নিজ বাড়িতে গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরের বারান্দা ও দরজায় তালা লাগিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ভিত্তিহীন তথ্য ও পুলিশকে নিয়ে উসকানীমূলক কথা বার্তা প্রচার করছিল। পুলিশ একাধিকবার তালা খুলে তাকে বাহিরে আসার অনুরোধ জানালে সে তালা ভেঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে বিভ্রান্ত করছিল। দীর্ঘ সময় পর পুলিশ তালা ভেঙ্গে বাবুকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় বাবুর ব্যবহারিত একটি চোরাই প্রাইভেটকার তার বাড়ির সামনে থেকে পুলিশ জব্দ করে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে চোরাই গাড়ী জব্দমূলে আরো একটি মামলা দায়ের করে।
ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবুর প্রতিবেশীরা জানায়, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিল বাবু। অভাব অনটনে নানীর বাড়িতে বেড়ে উঠেছে সে। সেনাবাহিনী থেকে চলে আসার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ব্যানারে নিজেকে জড়িয়ে রাখত সে। পাশাপাশি সাংসদ শিবলী সাদিকের হয়ে এবং দলের পক্ষে বিভিন্ন ধরণের কাজবাজ পরিচালনা করত বাবু। কিন্তু হঠাৎ করে রাতের আধারে লাখপতি হয়ে গিয়েছে বাবু। গড়ে তুলেছে বিশাল আকৃতির বিলাস বহুল বাড়ি এবং কিনেছে তিনটি প্রাইভেট কার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরে বেড়াত সে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একবার নির্বাচনও করেছে সে। আসন্ন ঘোড়াঘাট পৌরসভা নির্বাচনে ৮নং ওয়ার্ড থেকে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছিল।
স্থানীয়রা অধিকাংশ ব্যক্তিরা জানান, বাবু দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করত। মোবাইল কোর্ট তার ড্রেজার মেশিন একাধিক বার ভেঙ্গে দিয়েছিল। পাশাপাশি সে এসএস ট্রেড্রার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বালু ও পাথরের ব্যবসা করত। এছাড়াও এসএস ড্রাইভিং ট্রেনিং নামে একটি স্কুল স্থাপন করে অনেকে কাছে থেকে মোটা অংঙ্কের অর্থ আত্মসাদ করেছে এই বাবু। এই সব কিছুর বাহিরে সে নিজেকে ডেল্টা টাইমস পত্রিকার ঘোড়াঘাট প্রতিনিধি এবং একটি অনলাইন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিত।
ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবুকে গ্রেপ্তার ও জেল হাজতে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, সে বিভিন্ন ব্যানারের আড়ালে নিজেকে জড়িয়ে তার ভাই নান্নুর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম করে বেড়াতো। তার ভাইকে গ্রেপ্তার করায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানীমূলক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে। তাকে গ্রেপ্তারের পরেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এসেছে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা ও তদন্ত করে খতিয়ে দেখছি।