• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
শৈলকুপায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সংস্কারের অভাবে জীর্ণদশা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

শৈলকুপায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সংস্কারের অভাবে জীর্ণদশা

  • শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০২১

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহন করে চলেছে একটি বাড়ি। ৬৫ বছর আগে এক রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দিতে এখানে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বাড়িটি এখন জীর্ণ দশায় পরিণত হয়েছে। বাড়িটি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের বাখরবা গ্রামে।

জানা যায়, ১৯৫৪ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী প্রয়াত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়ার খোকসা হয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপার এ বাখরবা গ্রামে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্ধ্যায় কামরুজ্জামানের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে সকালে তার বাড়ির পুকুরে গোসল শেষ করে দুপুরে পাশের কাতলাগাড়ী বাজারে জনসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। সভা শেষ করতে সন্ধ্যা হওয়ায় সে রাতও তিনি এই বাড়িটিতে থেকে যান। পরদিন সকালে সেখান থেকে হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বঙ্গবন্ধু।

বাড়িটি ঘুরে দেখা যায়, সেই ঘর এবং একটি চৌকি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি হিসেবে আজও রয়েছে। ঘরটির সব কিছুই সেসময়কার। তবে যে প্লেটে জাতির জনক খেয়েছিলেন তা এখন নেই। আর যে চেয়ারে তিনি বসেছিলেন সেটিও কয়েক বছর আগে চুরি হয়ে গেছে। তবে তার ব্যবহৃত শোবার চৌকিটি ওই ঘরেই রয়েছে। অনেকেই বাড়িটি দেখতে আসেন। কিন্তু বাড়িটির বেহাল দশা দেখে হতাশ হন। বর্তমানে বাড়িটির একপাশে বসবাস করছেন বাড়ির মালিক প্রয়াত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের ভাজিতা আশফার আহমেদ বেলাল দম্পত্তি।

আশফার এ সাংবাদিককে বলেন, ঘরটির সব কিছুই সেসময়কার। কোনো কিছুই পরিবর্তন করা হয়নি। আমরা যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করছি বাড়িটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য তেমন নেই যে ঘরটি সংস্কার করবো। অনেক মানুষ বাড়িটি দেখতে আসে কিন্তু ঠিকমতো তাদের বসতেও দিতে পারি না, আবার বাড়িটি দেখে তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তাই সরকারের কাছে দাবি, যেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংস্কার করা হয়।

আশফার আহমেদের স্ত্রী রাফেজা সুলতানা বলেন, যখন বিয়ের পর এই বাড়িতে আসি তখন জানতে পারি শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়িতে এসেছিলেন এবং তিনি যে ঘরটিতে থেকেছিলেন ‘সেই ঘরেই আমার বাসর হয়েছিল’। আসলেই আমার খুবই ভালো লাগে এমন মহান মানুষটি যে বাড়িতে এসেছিলেন সেই বাড়িতে আমি বউ হয়ে এসেছি।

সে সময় জাতির পিতার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন ওই গ্রামের বৃদ্ধ তবারক হোসেন। তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর।

তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন বাড়িটিতে ছিলেন তখন তার সঙ্গে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। গোসলের সময় আমি তার গামছা এগিয়ে দিতাম। তার কাছে গল্প শুনতাম। যেদিন কাতলাগাড়ী বাজারে তার ভাষণ শুনেছিলাম, মনে হয়েছিল কী যেন আছে এই মানুষটির ভেতরে। আজ আসলে ভাবতে ভালো লাগে এমন এক মহৎ মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি।

বাখরবা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমরা গর্বিত বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহান মানুষ আমাদের গ্রামে এসেছিলেন, থেকেছিলেন। তবে তাদেরও দাবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাড়িটিকে ঘিরে জাতির জনকের ইতিহাস ধরে রাখতে সরকার যেন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন।

এ ব্যাপারে প্রয়াত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের মেয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য পারভীন জামান কল্পনার সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বাড়িতে যখন এসেছিলেন তখন আমাদের জন্মও হয়নি। পরবর্তীতে দুই ভাই ও দুই বোন সবাই মায়ের কাছ থেকে তার গল্প শুনেছি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, জেলাজুড়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত অনেক স্থান রয়েছে। এসব স্থানগুলো সংরক্ষণ, স্মৃতি ফলক, স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে সবার কাছে উদ্ভাসিত করা হবে। বিশেষ করে বাখরবা গ্রামের যে বাড়িটিতে তিনি রাত্রিযাপন করেছিলেন সেখানেও বাড়ির মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংস্কার হবে আর তা টিকে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এমনটিই প্রত্যাশা জেলাবাসীর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads