• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
নদী পারাপারে ভরসা দড়ি টানা নৌকা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

সেতু নির্মাণের ঘোষণায় আনন্দের বন্যা

নদী পারাপারে ভরসা দড়ি টানা নৌকা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২১

গ্রামের নাম কৃষ্ণনগর। তবে নগরের বালাই নেই। গ্রাম বলতে গ্রামই,একেবারে অবহেলিত। তবে সম্প্রতি দূর হলো বিদ্যুৎ সমস্যা। তবে এই গ্রামে জেলা কিংবা উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নেই কোনো রাস্তাঘাট। সেইসাথে নেই কোন শিক্ষার ব্যবস্থাও । এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নে তিতাস নদী ঘেষা কৃষ্ণনগর গ্রামের চিত্র।  এই গ্রামে শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে রয়েছে খুবই অবহেলিতভাবে। বর্ষা আর শুষ্ক মৌসুমে তিতাস নদী পারাপারে জন্য  গ্রামের লোকদের প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় দড়িটানা নৌকা দিয়ে। অন্যদিকে সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল গ্রামে পাকা সড়কসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও একেবারে বিপরীত চিত্র নদীর ওপারের কৃষ্ণনগর গ্রামে। পাকা রাস্তাতো অনেক দুরের কথা গ্রামে যাওয়ার জন্য কোনো মেঠো পথও নেই। ভরসা একমাত্র দড়ি টানা নৌকা।

এদিকে মানুষের যাতায়তের সুবিধার্থে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রতি ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে  ১৯ কোটি ৬৫ লাখ  টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সেতু নির্মাণ করার খবরে গ্রামের মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামটি আখাউড়া উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। আখাউড়া উপজেলা সদরে যাতায়ত করতে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের উপর দিয়ে আসা সড়ক ব্যবহার করতে হয়। আখাউড়ার বাসিন্দা হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কারণে মূলত জেলা সদরে ওই গ্রামের মানুষের যাতায়ত বেশি। ওই গ্রামের মানুষ কৃষি নির্ভর। সেখানকার নানা রকমের সবজি আখাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকাতে বিক্রি হয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে এলাকার কয়েকজন সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রী তাৎক্ষনিকভাবে সেতু করার বিষয়ে তাদের আশ্বাস প্রদান করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর দুই তীরে বাঁশের সাথে শক্ত করে বাধা আছে একটি প্লাস্টিকের দড়ি। মাঝিহীন একটি নৌকায় উঠে ওই দড়ি টেনে নদী পারাপার হচ্টে গ্রামের লোকজন। নদীর উপর সেতু না থাকায় গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত দড়ি টেনে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে তাদের। গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝঁকি নিয়ে পাশের গ্রামে গিয়ে তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করতে হয়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা পণ্য সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে বদলে যাবে এই গ্রামের চিত্র।

স্কুল শিক্ষার্থী রাবেয়া , শিশির ও আকাশ  জানায়, তিতাস নদীর উপর সেতু না থাকায় সারা বছরই নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। এই সেতুটি নির্মান করা হলে আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দুর হবে।

আহামেদ হোসেন নামের গ্রামের এক যুবক জানায়, বর্ষা আর শুষ্ক মৌসুমসহ সারাবছরই এই গ্রামের লোকদের এক প্রকার পানিবন্দী থাকতে হয়। আমাদের গ্রামে আসা-যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। তাই নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতে হয়। যোগাযোগ ব্যব¯’া ভালো না হওয়ায় গ্রামে আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। নদীর উপর সেতু না থাকায় দড়ি টানা নৌকা দিয়ে তাদের নদী পার হতে হয় । এতে প্রায় সময়ই দূর্ঘটনা ঘটে। তাই সেতুটি নির্মাণ হলে গ্রামের অনেক উপকার হবে। আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাঘব হবে।

বাদল মিয়া জানায়,এ গ্রামের সব মানুষ কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলা সদরের সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের কৃষি পন্যের ন্যায্য মূল্যে পায় না। নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে গ্রামের কৃষি, যোগাযোগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে।

বরিশল গ্রামের বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, কৃষ্ণনগর গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে এখন সেতু নির্মাণ হলে খুব সহজেই তারা আখাউড়া উপজেলা সদরে আসতে পারবে। এলাকার সংসদ সদস্য মন্ত্রী বলেই এত টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।

আব্দুল খালেক নামের গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, কৃষ্ণনগর একটি অবহেলিত গ্রাম। স্বাধিনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও এ গ্রামে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। কোনো মানুষ অসুখ হলে প্রথমে  নদী পার হতে হয়। তারপর বরিশল পাকা সড়ক ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় রোগী পথেই মারা যায়।

গ্রামের সর্দার আব্দুল মান্নান জানান, নির্বাচন আসলে আমাদের এখানে প্রার্থীরা এসে নানা ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান। কিন্তু ভোট চলে গেলে তাদের আর দেখা মিলে না।

ধরখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আরিফুল হক বাছির বলেন, ইউনিয়ন সদরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি মাটির রাস্তা করে দেওয়া হয়। তবে এখন সেতু নির্মাণ হলে ওই এলাকার মানুষ খুব সহজেই উপজেলা সদরে যেতে পারবে। এ কাজটির জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী (এলজিইডি)জহিরুল ইসলাম জানান, ১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিতাস নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অচিরেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads