কলেজপড়ুয়া দুই মেয়েকে বখাটে কর্তৃক উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করে দুই পা হারানো কালীগঞ্জের নলভাঙ্গা গ্রামের শাহানুর রাষ্ট্র থেকে কোনো চিকিৎসা সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে সাত লাখ টাকা। সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা নিয়েছেন। পচে যাওয়া তার দুই পা কেটে ফেলে এখন পঙ্গুত্ব জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ শাহানুরের সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। এ নিয়ে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি স্বত্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন। ঘটনার সাড়ে চার বছরেও তিনি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোনো সাড়া পাননি।
শাহানুর জানান, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর তার ওপর হামলা করে বখাটেরা। হামলায় তার দুই পা ভেঙে যায়। বড় মেয়ে শারমিন ও ছোট মেয়ে শাহনাজকে উত্ত্যক্ত করতো বখাটেরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় কালীগঞ্জের কয়েকজন সন্ত্রাসী তার ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। মামলা করার পরও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়া ও ভিকটিমের পরিবারকে বাড়িছাড়া করার বিষয়ে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর দ্বৈত বেঞ্চ স্বত্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে শাহানুরের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে বলে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আসামিদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে কারাবন্দি করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। উচ্চআদালতের নির্দেশের পর হামলার সাথে জড়িত আসামিরা ৩০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
এদিকে শাহানুরকে রাষ্ট্র কর্তৃক চিকিৎসা ও যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সমীর কান্তি সরকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে বিষয়টি অতীব জরুরি হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, হাইকোর্ট কর্তৃক সুয়োমোটো রুল ১৫/২০১৬ এর ২৯/১১/২০১৭ ইং তারিখের আদেশে ক্ষতিগ্রস্ত শাহানুরের চিকিৎসা রাষ্ট্র গ্রহণ করবে মর্মে এবং তার চিকিৎসায় যেন কোনো রকম ব্যত্যয় না ঘটে এতদবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করা হয়। এমতাবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালককে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
শাহানুরের চিকিৎসার বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গনি মোল্লাহ জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় তার পক্ষে ব্যক্তিগত সহকারী জয়নুদ্দীন খান বলেন, ঘটনাটি চার বছর আগের। তাই মাহামান্য আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যোগাযোগ করলে আমরা তার দুই পা প্রতিস্থাপনের বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
