শহিদুজ্জামান চাঁদ, শালিখা (মাগুরা)
দীর্ঘদিন ধরে হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পোহালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিজেরাই সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খানপুর বাজারসংলগ্ন চিত্রাপাড়ের বাসিন্দারা। শালিখার চিত্রা নদীর উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের নিজেদের অর্থায়নে ১৩৫ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ করছেন।
জানা গেছে, সেতু না থাকায় তাদের একমাত্র ভরসা ছিল নিজেদের তৈরি বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছিল ১০ গ্রামের হাজারো মানুষ। পারাপার হয় কয়েকশ শিক্ষার্থীও। চিত্রা নদীর দক্ষিণপাড়ের খানপুর বাজার সংলগ্ন চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত এ বাঁশের সাঁকোটিই ছিল পারাপারের একমাত্র ভরসা। বিশালাকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকত সবাই। পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছিল অভিভাবক ও শিক্ষকদের। একটি ব্রিজের অভাবে এমন দুর্দশা এখানকার বাসিন্দাদের। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েছে। তবে মেলেনি সেতু, মিলেছে আশ্বাস। এমনকি সাঁকো নির্মাণে সরকারি কোনো অনুদানও মেলেনি। প্রতি বছর দুপাড়ের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুঁটি। এটি তত্ত্বাবধান করে খানপুর বাজার কমিটি। এই দুর্ভোগ লাঘবে এলাকার তরুণসমাজ এগিয়ে এসেছে। তারা নিজেদের উদ্যোগে চিত্রা নদীর ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান, খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম হোসেন, বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক হারুন খান স্থানীয়ভাবে কিছু টাকা সংগ্রহ করে নদীর দুই পাশে মাটি ভরাট করে সেতু নির্মাণকাজের শুভসূচনা করেছেন।
বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান, সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও সোমবার খানপুরে হাট বসে। নদীর উত্তর পাশের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন এ হাটে।
খানপুর বাজার কমিটির সমপাদক হারুন অর রশিদ জানান, বাজারের দক্ষিণ পাশে রয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সমস্যা সমাধানের জন্যই সকলে নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। নদীর উত্তর পাড়ে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সীমাখালি, কাতলী, ছয়ঘরিয়া, হরিশপুর, খোলাবাড়ি, আড়ুয়াকান্দি ও পাঁচকাউনিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন পারাপার হচ্ছিল এ সাঁকো দিয়ে। এরই মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদরাসা, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পারপার হচ্ছিল এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই সাঁকো থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন একাধিকবার।
উদ্যোক্তা খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, শিক্ষার্থীদের বিশালাকৃতির সাঁকো পার হয়ে আসতে খুব কষ্ট হতো। সাঁকো থেকে ছিটকে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। ছেলেমেয়েদের কষ্ট লাঘবে আমরা অনেকদিন ধরে দাবি করে আসছি সেতু নির্মাণের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় আমরা স্ব-উদ্যোগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।