মহামারী করোনা ও করোনার কারণে দেওয়া লকডাউনে এবারও লোকসানে পরার আশঙ্কায় পুদিনা চাষিরা। রোজায় পুদিনার চাহিদা থাকে ব্যাপক তবে সে চাহিদা অনেকটাই শিথিল বলছেন বেপারীরা। লকডাউনে মালামাল পৌঁছানো থেকে শুরু করে বেচাকেনাও সমস্যার কারণ বলে জানান পুদিনা চাষি ফুল মিয়া। তিনি বলেন, গত বছর করোনায় তবুও পাইকারি কেজি প্রতি মূল্য ছিলো একশত থেকে আশি টাকা সেটা এখন এই করোনা কালে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে তবুও বিক্রি করে চালান পাবো বলে বললেন পুদিনা চাষিরা।
পুদিনা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে এর চাহিদা ব্যাপক। রমজান মাসে এটা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ইফতারিতে পুদিনা পাতা ছাড়া যেন চলেই না এটির রয়েছে নানা ঔষধী গুণ। দেশ ও বিদেশে পুদিনা পাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও মেলে আশানুরূপ। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পুদিনার আবাদ করা হয়। এতে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেছেন অনেক কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মুন্সীগঞ্জের শুধুমাত্র সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭ হেক্টরের অধিক জমিতে পুদিনা পাতার চাষ হয়। বিশেষ করে চান্দের চর, খাস্কান্দি ও মদিনা পাড়ায় ব্যাপক হারে পুদিনার চাষ করা হয়। পুদিনার অনেক জাত রয়েছে। এর মধ্যে পিপারমেন্ট, পিয়ার মেন্ট ওঅ্যাপেল মেন্ট হলো পুদিনার সবচেয়ে উন্নত জাত। জাপানি অরিজিন হলো আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে সহনশীল।
সরেজমিন দেখা যায় রোজাকে সামনে রেখে চান্দের চর, খাস্কান্দি ও মদিনা পাড়ার এলাকার এখন উঁচু নিচু জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে পুদিনার আবাদ করা জমিতে চলছে পুদিনা কাটার উৎসব। রজাকে সামনে রেখে এসব এলাকার কৃষক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ক্ষেতে থেকে পুদিনা পাতা তুলছেন, কেউ ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ আঁটি বাঁধা পুদিনা বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ তের আগাছা পরিষ্কারসহ নানা ধরনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।খাসকান্দি এলাকায় পুদিনা তে কাজ করছিলেন মদিনা পাড়ার কৃষক মোঃ সামছুউদ্দিন। তিনি বলেন,পুরো মুন্সীগঞ্জ এলাকার মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের চান্দের চরে সর্বপ্রথম পুদিনা চাষ শুরু করি আমরা।পুদিনা চাষি মামুন বলেন এবার পুদিনায় ব্যাপক লাভবান হবার আশায় অনেক জমিতে পুদিনা চাষ করেছিলাম প্রথমে বৃষ্টির কারণে সমস্যা হলেও পরে ভালো ভাবেই ফলন হচ্ছিলো তবে সব আশা শেষ করে দিলো মহামারী করোনা। খোজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শহরগুলোতে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলে ও বিয়ে বাড়িতে পুদিনার ব্যবহার বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক। বিশেষ করে রমজান মাসে বড়া, চাটনি, সালাত, বোরহানি বানানোর কাজে ব্যাপক হারে পুদিনাপাতা ব্যবহার হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে টুথপেষ্ট, তামাক, চা, সরবত, মিন্ট চকলেটসহ বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। তাই পুদিনা চাষও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর পুদিনাপাতার সবচাইতে বেশি চাহিদা হলো বিয়ে বাড়িতে বোরহানি বানানোর কাছে কারণ পুদিনাপাতা ছাড়া বোরহানি অর্জিনাল বোরহানি হয়না।
সিরাজদিখান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহসিনা জাহান তোরণ বলেন, পুদিনা পাতার চাষ বানিজ্যিক ভাবে শুধু উপজেলার বালুর চর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাতেই হয় তাছাড়া জেলাতে আর হয়না।আর বাকিরা যাও চাষ করে তাও বাড়ির ছাদে ব্যালকনিতে টবে। তার আনুমানিক মতে অত্র অঞ্চলে প্রায় ৭ হেক্টরের অধিকের মতো পুদিনাপাতার চাষ হয়।