• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

সিলেটেও দেখা দিতে পারে অক্সিজেন সংকট

  • ইমরান আহমদ, সিলেট
  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০২১

সিলেটে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে অক্সিজিনের চাহিদাও। সিলেট বিভাগের করোনা আক্রান্তদের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসা কেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল রোগির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। সাথে হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে, কিন্তু ভারতে অক্সিজেন সংকট থাকায় এমন শঙ্কা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। তবে, শামসুদ্দিন হাসপাতালে চাপ কমাতে সিলেট বিভাগের আরেক চিকিৎসাকেন্দ্র ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি বেড ও আইসিইউ করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিলেট বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেডদের চিকিৎসা জন্য শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ১’শ টি শয্যা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে শতাধিক বা তার কাছাকাছি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বিপাকে পড়ে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ। পরে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আরও ২’শ শয্যার আইসোলেশন তৈরী করা হয়। সাথে সাথে ১৮ টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বেডও প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে ৮ টি আইসিইউ চালু হয়েছে। বাকী ১০ টি দ্রুত প্রস্তুত হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। 

জানা যায়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি ভারতে অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
অক্সিজেনের অভাবে প্রতিবেশি এই দেশে মারা যাচ্ছেন অনেকে। ফলে পাঁচদিন থেকে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শও দেয়া হচ্ছে যতটুকু সম্ভব অক্সিজেন কম ব্যবহার
করার। এমন অবস্থায় স্পেকট্রার পক্ষ থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগের মতো অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব নয়। এজন্য অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তবে সিলেটে বর্তমানে চাহিদা পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভবিষ্যতেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

সূত্র জানিয়েছে, করোনা ডেডিকেটেড শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রতিদিন তরল অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার লিটারের উপরে। যার পুরোটাই সরবরাহ করে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। গত বছরের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসায় স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। যার ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার লিটার।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতি মাত্রায় সংক্রামক হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশি সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। বেশিরভাগ রোগীই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন এবং তাদের হাই-ফ্লো নজেল
ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। 

এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে প্রায় দেড় হাজার লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে। যা সম্পূর্ণ মাত্রায় সরবরাহ করছে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড।’ স্পেকট্রা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘যদি কোনোভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে কোম্পানিটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে তারা।’

এদিকে, বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে ৬৯০ টন অক্সিজেন বাংলাদেশে রপ্তানি করে ভারত। তবে ২১ এপ্রিলের পর ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। এই সময়ে ভারতে অক্সিজেনের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads