পটুয়াখালীর গলাচিপায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি রুটে স্পিডবোট চলাচল করছে। এসব রুটের যাত্রীদেরও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। করোনা মহামারীকে ঘিরে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে চলছে এ ব্যবসা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের হয়রানি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। স্পিডবোট মালিকরা বলছেন, লকডাউনের সময় রুট চালাতে বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত খরচ ও লোকসান হওয়ায় ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে এ বিষয় কিছুই জানা নাই বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলার বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান।
জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার বোয়ালিয়া স্লুইসসঘাট এলাকায় বোয়ালিয়া-কোড়ালিয়া (রাঙ্গাবালী), গলাচিপার পানপট্টি লঞ্চঘাট-কোড়ালিয়া ও গলাচিপার বদনাতলী লঞ্চঘাট-চরকাজল লঞ্চঘাট এলাকায় তিনটি রুটে স্পিডবোট চলাচল করছে। এসব এলাকায় চলাচলকারী স্পিডবোটের ভাড়া প্রতি কিলোতে ১০ টাকা করে নির্ধারণ করা থাকলেও এখানে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের নানারকম হয়রানির হেনেস্তার শিকার হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বোয়ালিয়া এলাকার ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন।
লিয়াকত হোসেন বলেন, বোয়ালিয়া স্পিডবোট দিয়ে যাত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে হয়রানির আমাদের হেনস্তা করে। এ ছাড়া কয়েকদিন আগে আমার এক ছোটো ভাই বোয়ালিয়া থেকে রাঙ্গাবালী যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে যায়। ওই সময় ১২০ টাকা করে টিকিট নির্ধারণ থাকলেও তাদের তিনজনের কাছে এক হাজার টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। পরে বোয়ালিয়া বাজারের লোকজন বলে কয়ে ৭০০ টাকায় তিনজনের টিকিট কেটে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময় ১৮ জন করে যাত্রী পারাপার করে। কিন্তু লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তাও তারা মানছেন না। এ নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে বোয়ালিয়া স্পিড বোট মালিক সমিতির পক্ষের মালিক মো. নবীন খলিফা বলেন, ‘আমরা তিনটি সমিতি মিলে মোট ৭১ জন মালিক যৌথভাবে স্পিডবোট ব্যবসা করছি। লকডাউনের কারণে যাত্রী কম হয়। লকডাউনে আমরা যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে রাঙ্গাবালীর প্রশাসনে অনুরোধে সীমিতভাবে ঘাট চালু রাখছি। যাত্রী কম; কিন্তু এলাকার মানুষের জন্য মাঝেমধ্যে দুই একটা ট্রিপ দেই। আমাদের তেল খরচ হলেই যাত্রীদের পারাপার করি। এ ছাড়া আমরা কোনো অতিরিক্ত টাকা বা যাত্রী নিই না। তবে ২০০ টাকা করে না নিলে এখন আমাদের পোষায় না।
পণ্য পরিবহনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব সময় আমরা কাঠ বা এ ধরনের পণ্য পরিবহন করি না। জরুরি কিছু সময় মাঝে মধ্যে এগুলো পরিবহন করি। এতে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার হয়নি।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘আমি পটুয়াখালীতে নতুন এসেছি। এখন পর্যন্ত সব কিছু জানি না। তবে লকডাউনের সময় স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকার কথা। এ ছাড়া স্বাভাবিক সময় এ এলাকার স্পিডবোটে ১২ জন করে যাত্রী পারাপারের কথা রয়েছে। এতে যাত্রীদের সাথে কোনো পণ্য পরিবহন করতে পারবে না। অতিরিক্ত ভাড়া ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এমন হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’