কালীগঞ্জে কৃষি জমির ও শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাজমুল শেখের বিরুদ্ধে। তবে অবৈধভাবে
মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পল্লীবিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের বেশ কিছু খুঁটি।
জানা গেছে, উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের নেতৃত্বে স্থানীয় আরো কয়েকজন যুবলীগ নেতাকে নিয়ে জামালপুর গ্রামে কৃষি জমির মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়ে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে ওই যুবলীগ নেতা ও তার অনুসারীরা স্থানীয়দের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি এবং শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেছে। ফলে ওই এলাকায় থাকা পল্লীবিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের খুঁটিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো সময় মাটির সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো ধসে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে পুরো কালীগঞ্জ। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানালে গত রোববার সকালে ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কামরুজ্জামানকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তবে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম। পরে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। চেয়ারম্যান তিন দিনের সময় চেয়েছেন, ওই কৃষি জমির কেটে নেওয়া মাটি পূরণ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার বলেন, নাজমুল মেম্বার মাটি নতুন কাটছেন না। অনেক আগে থেকেই তার লোকজন মাটি কাটছে। এ মাটি কাটার ফলে পল্লীবিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আমি মেম্বারকে ওই খুঁটির পাশে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি, বিষয়টি ঠিক তা না। তাছাড়া বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম অবগত। তবে বৈদ্যুতিক খুঁটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাটি ও ইট দিয়ে মেরামত করতে ২/৩ দিন সময় লাগবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জামালপুর ইউনিয়ন ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখ জানান, গত দুই বছর ধরে তিনি ওই এলাকার কৃষি ও শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ের মাটি তার লোকজন দ্বারা স্থানীয় ইট ভাটায় বিক্রি করছেন। হঠাৎ করে পল্লীবিদ্যুৎ অভিযোগ আনে তাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও এটা আমার দেখার বিষয় না, তারপরও তারা থানায় অভিযোগ করতে যায়। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার শর্তে তা আর করেনি। বৈদ্যুতিক খুঁটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মাটি ও ইট দিয়ে মেরামত করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম বলেন, আসলে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় কৃষি জমির মাটি বিক্রি করছে। সেক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতন করার চেষ্টা করি। তবে অবৈধভাবে যদি কেউ মাটি কেটে নেয় সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা শাস্তির আওতায় আনা হয়। তিনি আরো বলেন, কৃষি জমির উপরে পলি জমা মাটি কেউ যদি কেটে নিয়ে যায়, তাহলে সেই জমির পলি পূরণ করতে নানা জৈব সার ব্যবহারের কমপক্ষে ৩০ বছর পরে ওই কৃষি জমির উর্বর ক্ষমতা ফিরে আসে।
কালীগঞ্জ থানার ওসি একেএম মিজানুল হক বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিবলী সাদিক বলেন, বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএমকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
